ফরিদপুরে মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচল বন্ধের দাবিতে বাস ধর্মঘট পালন করছে ফরিদপুরের পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতি। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ছয়টায় বাস ধর্মঘট শুরু হয়। আজ মঙ্গলবার শুধু ঢাকা-ফরিদপুর বাদে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ফরিদপুর থেকে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, বরিশাল, শরীয়তপুর, মাগুরা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন আন্তজেলা রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
ফরিদপুর সিএনজিচালক এবং পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে ফরিদপুরের তালমার মোড় এলাকায় সিএনজিচালক নাজমুলকে (২৫) মারধর করেন বাসশ্রমিকেরা। এ ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তালমার মোড় এলাকায় তিনটি বাসের কাচ ভাঙচুর করেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরা বলে অভিযোগ করেছেন জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী।
পরে ফরিদপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসশ্রমিকেরা অতর্কিতভাবে হামলা চালালে ফরিদপুর জেলা সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি মো. রিপন (৪৫) আহত হন। পরে তাঁকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসব ঘটনার জেরে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা থেকে বাসশ্রমিকেরা আন্তজেলা বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পরিবহনমালিকেরাও পরিবহন চলাচল বন্ধ রাখেন।
আজ বেলা সাড়ে ১১টায় ফরিদপুর শহরতলির ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের মুন্সি বাজার চৌরাস্তা এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের হয়রানি ও মারধরের প্রতিবাদে চালক ও মালিক সমিতির উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। পরে তারা সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এ সময় ফরিদপুর জেলা বাস মালিক সমিতির হামলার তীব্র নিন্দা জানায় তারা।
ধর্মঘটের কারণে আজ সকালে বাস কাউন্টার থেকে ঢাকা-ফরিদপুর রুট ছাড়া দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল করেনি।
ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর মহল্লার বাসিন্দা আলীমুজ্জামান বলেন, আজ জরুরি কাজে তাঁর শরীয়তপুর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস চলাচল না করায় তাঁকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহিন্দ্রায় ভেঙে ভেঙে শরীয়তপুর যেতে হয়েছে। এতে টাকা বেশি খরচের পাশাপাশি সময়ও লেগেছে।
মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহিন্দ্রা চালানো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাসশ্রমিক ও সিএনজি ও মাহিন্দ্রার শ্রমিকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এ সমস্যা সমাধানের জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরা এর আগেও পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছিলেন। কিন্তু বাসশ্রমিকদের কারণে সমস্যার সমাধান হয়নি।
ফরিদপুর জেলা সিএনজিচালক সমিতির সদস্য মতিউর শেখ বলেন, ‘ফরিদপুর বাস মালিক সমিতির অত্যাচারে সিএনজিচালকেরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। ফরিদপুর গেলে তাঁরা আমাদের চালকদের মারধর করেন। এ ছাড়া বাস মালিক সমিতির কারণে আমাদের সিএনজি-মাহিন্দ্রাসহ ছোট গাড়িগুলোর রোড পারমিট পাচ্ছি না। রোড পারমিটসহ বাস মালিক সমিতির অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তির জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘মহাসড়কে মাহিন্দ্রা চলাচল বন্ধ করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি। মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচলের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু মহাসড়কে তিন চাকার অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়নি। এখন এ পথে সিএনজি চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে আমরা যাত্রী পাচ্ছি না। এ জন্য বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন শ্রমিকেরা।’
কামরুল ইসলাম আরও বলেন, ঢাকার যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে শুধু ফরিদপুর-ঢাকা রুটে বাস চলাচল করছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ ও আন্তজেলা পথে সব বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
ফরিদপুরের ট্রাফিক পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান করা হবে।’