সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন শিক্ষার্থী মো. সাজ্জাদ হোসেন। বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হল চত্বরে
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন শিক্ষার্থী মো. সাজ্জাদ হোসেন। বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হল চত্বরে

‘মারা গেলে লাশ মা–বাবার কাছে পাঠিয়ে দেবেন’

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ করেছেন। আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে তিনি বলেন, অন্য বিভাগের ছাত্ররা তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। অথচ ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না। আর তিনি যদি হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেন, তাহলে তাঁর লাশ যেন তাঁর মা-বাবার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

ওই শিক্ষার্থীর নাম মো. সাজ্জাদ হোসেন। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স (এফএমবি) বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হল চত্বরে সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৫ নভেম্বর ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগ ও ফার্মেসি বিভাগের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। খেলার মধ্যে দুই বিভাগের খেলোয়াড়দের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক এবং একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই রাতে ফার্মেসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রনি মৃধা তাঁর ১০-১২ জন সহযোগীকে নিয়ে শেখ রাসেল হলে যান। তাঁরা হলে থাকা ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থীদের খুঁজতে থাকেন। এ সময় ৬০৪ নম্বর কক্ষ থেকে মো. জাহিদ হোসেনকে বের করে ৫০৮ নম্বর কক্ষে নিয়ে মারধর করা হয়।

পরদিন রনি মৃধা দুপুরে আবার শেখ রাসেল হলে যান। ওই দিন ৩০৩ নম্বর কক্ষে গিয়ে সাজ্জাদ হোসেনের কাছে তাঁর বিভাগের অন্য দুই-তিন শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে জানতে চান যে তাঁরা কোথায় আছেন? একপর্যায়ে সাজ্জাদের মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে তাঁকে লোহার পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারপিট করেন। ছুরি দিয়ে আঘাত করতে গেলে সাজ্জাদ হাত দিয়ে ঠেকান। কিন্তু তাঁর বাঁ চোখের কোণে আগাত লাগে। পরে সাজ্জাদকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

সাজ্জাদ এ ঘটনার বিচার ও নিজের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট মো. এমদাদুল হক সাজ্জাদকে হলে ফিরে যেতে বলেন। পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মানবিক অনুষদের ডিন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মো. হাসিবুর রহমানকে প্রধান করে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তদন্ত কমিটি উভয় পক্ষকে নোটিশ দেয় দেখা করার জন্য।

এ অবস্থায় ১১ নভেম্বর দুপুরে রনি মৃধা তাঁর দুই সহযোগীকে নিয়ে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হলে যান। হল থেকে জাহিদ হোসেন ও সাজ্জাদ হোসেনকে ডেকে হত্যার হুমকি দেন। এরপর উপাচার্যের বাসভবনের সামনের ফটকে অনশনে বসেন সাজ্জাদ। পরে রাত ১১টার দিকে প্রক্টরিয়াল বডি ও শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট সেখানে যান। তাঁরা সাজ্জাদকে ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিলে সাজ্জাদ অনশন ভেঙে হলে ফিরে যান। কিন্তু এখনো এ ঘটনার কোনো সুরাহা হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে সাজ্জাদ বলেন, গত ১১ দিন তিনি ঠিকভাবে ঘুমাতে পারছেন না। সব সময় হতাশা ও ভয়ে থাকতে হয়। অথচ তাঁকে যারা মারপিট করল, তাঁরা ক্যাম্পাসে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁরা ঠিকই ক্লাস, পরীক্ষা দিচ্ছেন। তাঁর মনে হয়, তিনি সঠিক বিচার পাবেন না। তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাই যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। হতাশা থেকে তিনি যদি কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে আত্মহত্যা করেন, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সহপাঠীদের কাছে তাঁর অনুরোধ, তাঁর লাশ যেন মা-বাবার কাছে পৌঁছে দেয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সাজ্জাদ হোসেন যে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন, সেটা তাঁরা জানেন না। সাজ্জাদ হোসেনের অভিযোগের বিষয় নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। সবকিছু যাচাই–বাছাই করতে একটু সময় লাগে। দুই-এক দিনের মধ্যে কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে।