মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ভারতীয় পুরোহিতের কটূক্তি এবং সেই বক্তব্যকে বিজেপির এক নেতার সমর্থন দেওয়ার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজশাহী, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, বগুড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সংগঠন ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্র দিঘলিয়া জামিয়া ইসলামিয়া আজিজিয়া শামসুল উলুম মাদ্রাসার সামনে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম গোপালগঞ্জ জেলা শাখা। শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারা এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
প্রতিবাদ সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে হেফাজতের জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ওমর ফারুক, মাওলানা শাহ জালাল, মাওলানা ওসমান গনী, মাওলানা হুসাইন আহমেদ, মাওলানা শুআইব আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মাওলানা আবদুল্লাহ বলেন, ‘গত আগস্ট মাসে রাসুল (সা.)–কে নিয়ে কটূক্তি করেন ভারতের মহারাষ্ট্রের হিন্দু পুরোহিত রামগিরি মহারাজ। তাঁকে সমর্থন করেছেন বিজেপির বিধায়ক নীতেশ রানে। এ দুজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হলেও এখনো রাজ্য সরকার তাঁদের গ্রেপ্তার করেনি। এর প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে মহারাষ্ট্রের মুসলিম জনতা। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। মহানবীকে অবমাননাকারীদের গ্রেপ্তার করে সঠিক বিচারের দাবি জানাই।’
এদিকে নড়াইলে মহানবীকে কটূক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। জুমার নামাজের পর নড়াইল পৌরসভার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে মিছিলটি বের হয়ে হাসপাতালের মোড় ঘুরে পুরোনো বাস টার্মিনালে এসে সমাবেশ করা হয়। সামাজিক সংগঠন ‘উষার আলো ফাউন্ডেশন’ এ কর্মসূচির আয়োজন করে। সংগঠনটির সভাপতি মিনহাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাফায়াত উল্লাহর সঞ্চালনায় এ সময় তরুণ সমাজসেবক তুহিন বিন আবদুর রাজ্জাক, মাওলানা শামীম আহমাদ ও আইয়ুব আলী আনসারী বক্তব্য দেন।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বসবাস করছে। কিন্তু বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা ঘটলেই ভারত থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নেই। অথচ ভারতেই সংখ্যালঘু কোনো জাতি নিরাপদভাবে বসবাস করতে পারে না। মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির জন্য ভারতকে ক্ষমা চাইতে হবে।
একই ঘটনায় রাজশাহীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীসহ মুসলিম জনতা। আজ জুমার নামাজের পর নগরের সাহেববাজার বড় মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিলটি নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার একই স্থানে গিয়ে সমাবেশ করে। সাধারণ শিক্ষার্থী, রাজশাহী ও মুহাম্মদীয়া যুব সুন্নি, রাজশাহী দুটি পৃথক ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সমাবেশে মুহাম্মদীয়া যুব সুন্নির সভাপতি মো. নুরুজ্জামান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুস সোবহান, মাহমুদুর রহমান, রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী আবদুর রহিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা যাবে না এবং ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা দিতে হবে। মহানবী (সা.)–কে নিয়ে ব্যঙ্গকারীদের ফাঁসি দিতে হবে।
এদিকে মহানবী (সা.)-কে কটূক্তির প্রতিবাদে রংপুরের তারাগঞ্জের চৌপথী এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ছাত্র-জনতা ও মুসল্লিরা। জুমার নামাজের পরে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা ক্ষমতায় আছেন, আপনারা এখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে নিন্দা প্রকাশ করেননি। ভারতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় প্রতিবাদ জানাতে হবে। আমরা ছাড় দেব না। সেই দিন আর নেই। তাই সময় থাকতে জনগণের মন বোঝার চেষ্টা করেন।’
একই ঘটনায় বগুড়ার শেরপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে। জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ ও সর্বস্তরের ওলামায়ে কেরাম তাওহিদী জনতার ব্যানারে জুমার নামাজের পর উপজেলা বাসস্ট্যান্ডে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক শ মানুষ অংশ নেন। এ সময় বাসস্ট্যান্ড এলাকাজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। পরে তাঁরা সমাবেশ করেন। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে মাওলানা মোকাল্লেম হোসাইন, মাওলানা আতিকুর রহমান, মাওলানা এজাজ উদ্দিন, মাওলানা মো. আবদুর রহমান, মাওলানা মতিউর রহমান, মুফতি আবদুল আওয়াল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
পঞ্চগড়ে সম্মিলিত খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ মিছিল করেছেন মুসল্লিরা। শহরের চৌরঙ্গী মোড় থেকে মিছিল বের করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত পথসভা করা হয়। পথসভায় পঞ্চগড় সম্মিলিত খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, খেলাফত মজলিসের জেলা শাখার সভাপতি মীর মোর্শেদ তুহিনসহ ইসলামী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।
বক্তারা রাসুল (সা.)–কে নিয়ে কটূক্তি করার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মহারাষ্ট্রের পুরোহিত রামগিরি মহারাজ ও বিজেপির বিধায়ক নীতেশ রানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভারত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারিও দেন তাঁরা। পরে বিশ্বের সব মুসলিমের শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
এদিকে নীলফামারীর সৈয়দপুরে কটূক্তির প্রতিবাদে ও অভিযুক্ত দুজনের শাস্তির দাবিতে বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কয়েক শ মুসল্লি। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আহ্বানে জুমার নামাজের পর সৈয়দপুর শহরের জিআরপি মোড় থেকে মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন তাঁরা। পরে জিআরপি মোড়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
সমাবেশে আহলে সুন্নাতের আসিফ আশরাফী, মাওলানা ইমরান হাবিব, মাওলানা সাজ্জাদ, মমতাজ রাসুল সোলাইমানী প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা মহানবী (সা.)–কে কটূক্তির প্রতিবাদ জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকেও রাষ্ট্রীয়ভাবে এর প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান।
মহানবী (সা.)–কে নিয়ে কটূক্তি ও ইসলাম ধর্মকে অবমাননার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে মিছিল বের করা হয়। এতে বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। পরে স্বাধীনতা চত্বর এলাকায় সমাবেশ করেন তাঁরা। সমাবেশে বক্তারা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে কূটনৈতিকভাবে এ ঘটনার নিন্দা জানানোর দাবি জানান এবং ভারতীয় পণ্য বর্জনের জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, পঞ্চগড়, তারাগঞ্জ, রংপুর, শেরপুর, বগুড়া, সৈয়দপুর, নীলফামারী ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়]