সুনামগঞ্জে গত এক সপ্তাহে বিএনপির ৩৮ নেতা-কর্মী ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে জেলার ৫টি থানায় মামলা হয়েছে ১০টি। বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা সব মামলার বাদী পুলিশ। এসব মামলায় আসামি আছেন প্রায় ৭০০ জন। এর মধ্যে এজাহারে নাম আছে ২১৪ জনের, বাকিরা অজ্ঞাতনামা হিসেবে।
সুনামগঞ্জে একের পর এক মামলা ও গ্রেপ্তারে নেতা-কর্মীরা হঠাৎই বেকায়দায় পড়েছেন। সুনামগঞ্জে এর আগে এত অল্প সময়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এত মামলা হয়নি কখনো। ৩০ তারিখের হরতালে তেমন কিছু না হলেও ৩১ অক্টোবরের অবরোধে শহর ও শহরতলির কোনো কোনো স্থানে যানবাহন চলাচলে বাধা ও ভাঙচুরের কিছু ঘটনা ঘটে। ওই দিন সকালে পুলিশ শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ডে অভিযান চালিয়ে বিএনপির ১০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। সুনামগঞ্জ শহরে বিএনপির সব কর্মসূচি মূলত পুরোনো বাসস্ট্যান্ডকেন্দ্রিক। এখানেই দলের কার্যালয়। এই গ্রেপ্তারের পর নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। পরের কর্মসূচিগুলোতে নেতা-কর্মীরা ঝটিকা হামলা করেছেন যানবাহনে। কোথাও কোথাও রাতে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মিছিল করেছেন।
সুনামগঞ্জে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের মধ্যে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আবুল মনসুর মো. শওকত, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও ধর্মপাশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মোতালেব খান, জেলা বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক রাকাব উদ্দিন, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাসিম চৌধুরী আছেন।
এখন গ্রেপ্তার এড়াতে নেতা-কর্মীদের অনেকেই বাড়িছাড়া। গত দুই দিনের অবরোধে মাঠ অনেকটা খালি ছিল। বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঠে তেমন একটা দেখা যায়নি।
তবে বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, পুলিশ সবার বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে, পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। যাকে পাচ্ছে, তাঁকেই গ্রেপ্তার করছে। নেতারা বলছেন, তাঁরা মাঠে আছেন। যেকোনো মূল্যে তাঁরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করবেন। কোনো বাধাই তাঁদের আটকাতে পারবে না।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলার মধ্যে অর্ধেকই সদর মডেল থানায়। ২৯ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত এসব মামলা হয়েছে। সর্বশেষ রোববার রাতে করা একটি মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. নূরুল ইসলামসহ ৪০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি আছেন ২০-২৫ জন। পুলিশ এই মামলার দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। এর আগে ৩১ অক্টোবর জেলা শহরে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবুল মনসুর মো. শওকত ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক রাকাব উদ্দিনও আছেন। পরে শান্তিগঞ্জ উপজেলায় গ্রেপ্তার হন জেলা কমিটির আরেক সহসভাপতি আনসার উদ্দিন।
জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ২৯ অক্টোবর করা একটি মামলায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৮০ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়। পরে ২ নভেম্বর জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে আরেকটি মামলা হয়েছে। এই মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি আছেন আরও ৩২ জন। শান্তিগঞ্জে এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শাল্লায় ২৮ অক্টোবর ৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। এ উপজেলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন দুজন। ধর্মপাশা উপজেলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৯ জন। এ উপজেলায় ২৯ অক্টোবর করা একটি মামলায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব খান গ্রেপ্তার হন। এ মামলায় ৪৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। দোয়ারাবাজার উপজেলায় ২৯ অক্টোবর ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা হয়েছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।
এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঠে নামতে দিচ্ছে না। একের পর এক গায়েবি মামলা দিয়ে গণগ্রেপ্তারে নেমেছে। তবুও আমরা কর্মসূচি পালন করছি। মামলা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন করে আমাদের আন্দোলন থেকে সরানো যাবে না।’
জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ বলেন, এখনো তাঁর নামে কোনো মামলা হয়নি। তবু পুলিশ একাধিকবার তাঁর বাড়িতে গেছে।
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার এহসান শাহ বলেন, হরতাল-অবরোধের নামে বিভিন্ন স্থানে হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। যানবাহন চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের কাজ হলো মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা। এ জন্য পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে।