রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলে ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সামছুল ইসলামের বাঁ কানের পর্দা ফেটে গেছে। ঘটনার পর থেকে তিনি বাঁ কানে শুনছিলেন না। গত বুধবার রাতে কানের ব্যথা নিয়ে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি পরীক্ষার প্রতিবেদন পান।
হাসপাতালের নাক কান ও গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই রোগীর কানের পর্দা ছেঁড়া।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামছুল ইসলাম জানান, বুধবার রাতে হঠাৎ কানে ব্যথা অনুভূত হয়। অসহ্য ব্যথা নিয়ে রাতেই তিনি রাজশাহী মেডিকেলের নাক কান ও গলা বিভাগের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন। পরে চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা দেন। বাইরে গিয়ে তিনি সেগুলোর পরীক্ষা করান। প্রতিবেদন দেখে চিকিৎসক জানান, তাঁর বাঁ কানের পর্দা ফেটে গেছে। তিনি এখনো শুনতে পারছেন না। এ ছাড়া মারধরের কয়েক দিন পর তিনি শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন।
হাসপাতাল থেকে পাওয়া সামছুলের ছাড়পত্রে লেখা আছে, Ruptured TM (Left)। এর অর্থ হচ্ছে বাঁ কানের কিছু একটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
এর আগে ১৯ আগস্ট বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কক্ষে আটকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সামছুল ইসলাম। তিনি মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতেই ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর দপ্তরে অভিযোগ দেন। এরপর রাতেই তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। অভিযোগের একটি অংশে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা হুমকি দিয়ে তাঁকে বলেন, কাউকে বললে আবরারের যে অবস্থা হয়েছে, সেই অবস্থা হবে।
এরপর টানা দুই দিন অর্থনীতি বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক মিলে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্তের শাস্তির দাবি জানান। ভুক্তভোগীর নিরাপত্তার দাবিও তোলা হয়। বর্তমানে তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে।
ঘটনার পর বুধবার সামছুল ইসলাম অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ তুলে নেওয়ার আবেদন করেন। সেখানে তিনি বলেন, ভাস্কর সাহা তাঁর কাছে কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। সেই সঙ্গে ভাস্কর তাঁকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয়েছেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে ভাস্করকে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন। ভাস্করের বিরুদ্ধে তাঁর এখন কোনো অভিযোগ নেই। এ অবস্থায় প্রশাসনের কাছে তাঁর ভবিষ্যতের নিরাপত্তা দেওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে সামছুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পরদিন সকালেই অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা তাঁর কক্ষে আসেন। সঙ্গে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদধারী নেতাও ছিলেন। তাঁরা অভিযোগ তুলে নিতে অনুরোধ করেন। তিনি ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কথা ভেবে অভিযোগ তুলে নিয়েছেন।
অভিযুক্ত ভাস্কর সাহা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি যেহেতু ক্ষমা চেয়েছেন, সেই জায়গা থেকে সামছুল অভিযোগ তুলে নিয়েছেন। আর তাঁরা একই শিক্ষাবর্ষের, তাঁর সঙ্গে বন্ধুর মতো সম্পর্ক। তিনি এ বিষয়ে ক্ষতিপূরণও দিয়েছেন। সামছুলের সঙ্গে সব সময় তাঁর কথা হচ্ছে। গতকালও তাঁদের কথা হয়েছে, দেখা হয়েছে।