ঝগড়ার ‘প্রতিশোধ’ নিতে শিশু সাব্বিরকে হত্যা, পরে মুক্তিপণ দাবি

সাব্বির মিয়া
ছবি: সংগৃহীত

এক মাস আগে আবু মিয়ার ছেলের সঙ্গে এলাকার কয়েকজনের ঝগড়া হয়। ঝগড়া গড়ায় পরিবারের বড়দের মধ্যে। আবু মিয়া সে ঘটনার প্রতিশোধ নিতে সাব্বির মিয়াকে (৯) হত্যার পরিকল্পনা করেন। ঘটনার দিন সাব্বির আবু মিয়ার দোকানে যায়। সেখান থেকে ধরে নিয়ে তিনি সাব্বিরকে হত্যা করেন। পরে ঘটনা অন্যদিকে ঘোরাতে মুক্তিপণের জন্য চিরকুট দেন।

সাব্বির মিয়া হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আবু মিয়াকে (৩৪) পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আজ বুধবার ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর মডেল থানার পুলিশ তাঁকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে গ্রেপ্তার করে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহত শিশু সাব্বির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের পূর্ব খাঁটিহাতা গ্রামের শরাফত আলীর ছেলে। আবু মিয়াও ওই গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবু মিয়ার বাড়ির সামনের গ্রামীণ সড়কে ছোট একটি টংদোকান আছে। পালা করে ওই দোকানে বসেন আবু মিয়া, তাঁর স্ত্রী আরমিনা বেগম (২৮), বাবা আছন আলী (৬০) ও মা আলেখা বেগম (৫৬)। ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড মোড় থেকে এক কিলোমিটার দূরে দোকানটির অবস্থান। দোকানের সামনের সড়কটি দিয়ে শুধু মোটরসাইকেল ও রিকশা যাতায়াত করতে পারে।

থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যার পর আবু মিয়ার দোকানেই গিয়েছিল সাব্বির। এরপর সে আর ফেরেনি। পরদিন ভোর ছয়টার দিকে বাড়ির প্রবেশপথে চিরকুট পায় শিশুটির মা। চিরকুটে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে শিশুটিকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। চিরকুটে টাকা পাঠানোর জন্য একটি মুঠোফোন নম্বরও দেওয়া ছিল। মুঠোফোনের সূত্র ধরে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাতে থাকে। পরে তার লাশ গত শনিবার বাড়ির অদূরে নির্জন একটি পুকুরের কচুরিপানার নিচ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

মুঠোফোনের সূত্র ধরে পুলিশ প্রথমে গত রোববার রাতে মাছুম মিয়াকে (২০) এবং সোমবার বিকেলে মাছুমের ভাই রুবেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁরা খাঁটিহাতা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁদের দেওয়া জবানবন্দি থেকে উঠে আসে আবু মিয়ার নাম।

মাছুম ও রুবেল তাঁদের জবানবন্দিতে বলেন, সাব্বিরকে নির্জন পুকুরের পাড়ে নিয়ে চড়থাপ্পড় দিয়ে ঘাড়ে ধরে মাটিতে ফেলে দেন আবু মিয়া। এরপর মাটিতে লুটিয়ে পড়া সাব্বিরের গলা টিপে ধরেন আবু মিয়া। সাব্বির চিৎকার শুরু করলে আবু মিয়া তার মুখে কাপড় গুঁজে দেন। পরে রশি দিয়ে হাত বেঁধে লাশ নির্জন পুকুরের পানির কচুরিপানার নিচে ফেলে রাখে। পরে সাব্বির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা যেন অপহরণ বলে মনে হয়, এ জন্য তিনি মুক্তিপণের চিরকুট সাব্বিরের বাড়ির সামনে ফেলে দিয়ে আসেন।

গ্রেপ্তার হওয়ার পর আবু মিয়া পুলিশকে জানান, এক মাস আগে তাঁর ছেলের সঙ্গে সাব্বিরের ঝগড়া হয়। এ নিয়ে দুই পরিবারের বড়দের মধ্যেও বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে।
নিহত সাব্বিরের চাচা লিয়াকত আলী (২৬) বলেন, ‘ওই ঝগড়ার পর আবু মিয়া ও তাঁর স্ত্রী ঘোষণা দিছিল, তাঁরা সাব্বিরকে মেরে টাকা দিয়া দিবে। আমরা বিষয়টারে গুরুত্ব দেই নাই।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন বলেন, রুবেল ও মাছুম হত্যার ব্যাপারে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আবু মিয়াও পুলিশের কাছে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। শিশুদের ঝগড়ার জের ধরে তিনি এমনটি করেছেন বলে জানান।