প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জনকে গুজব বললেন আজমত উল্লা খান

আজমত উল্লা খান
ফাইল ছবি

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরে যাওয়া আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে নিয়ে নতুন গুঞ্জন, তিনি প্রয়াত চিত্রনায়ক ফারুকের ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে কর্মী-সমর্থকদের অনেকে আজমত উল্লাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টও করেছেন। তবে এ ধরনের গুঞ্জনকে গুজব হিসেবে উল্লেখ করেছেন গাজীপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি।

ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার আকবর হোসেন পাঠান ওরফে চিত্রনায়ক ফারুক। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ১৫ মে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ওই দিন থেকে তাঁর (ঢাকা-১৭) আসনটিকে শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

ঢাকা-১৭ আসনটি অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত। এই এলাকায় পড়েছে গুলশান, বনানী, ঢাকা সেনানিবাস ও ভাষানটেকের কিছু অংশ। এই আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে। আলোচনায় সবশেষ যুক্ত হয়েছে আজমত উল্লার নাম। বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হচ্ছে, উপনির্বাচনের জন্য দলের ত্যাগী, পরীক্ষিত ও সজ্জন নেতা হিসেবে পরিচিত আজমত উল্লাকে বেছে নিতে পারে দলীয় হাইকমান্ড।

গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ভোটে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের কাছে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে হারেন নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা। এর আগে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। সেবার হারেন বিএনপির প্রার্থী প্রয়াত এম এ মান্নানের কাছে।

নির্বাচনে পরাজয়ের দুই দিন পর রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আজমত উল্লাকে ডেকে পাঠান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আসার পর থেকেই আলোচনা শুরু হতে থাকে, ঢাকা-১৭ আসনে দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন গাজীপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এমন কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি সংগঠনকে শক্তিশালী এবং ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গাজীপুর সিটি নির্বাচন ও গাজীপুরের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি দলের ত্যাগী নেতাদের দলের বিভিন্ন কমিটিতে মূল্যায়ন করতে বলেছেন। এ ছাড়া আরও কিছু বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে, এগুলো এখনই বলতে চাচ্ছি না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে যেসব গুঞ্জন চলছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আজমত উল্লা বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারা এগুলো ছাড়াচ্ছে, সেটি অপপ্রচার। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত বা আলোচনা হয়নি।’

বিষয়টি নিয়ে সোমবার রাতে নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছেন আজমত উল্লা। সেখানে তিনি লিখেছেন, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে তাঁর নাম জড়িয়ে যেসব পোস্ট করা হচ্ছে, সেগুলো মিথ্যা, অপপ্রচার ও গুজব। এ ধরনের অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান আজমত।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে নৌকার পরাজয়ে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি মনে করছেন, দলীয় কোন্দল এবং নির্দিষ্ট একটি পক্ষের বিরোধিতার কারণেই ভরাডুবি হয়েছে গাজীপুরে।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এসেই গাজীপুর মহানগরের থানা, ওয়ার্ড ও বিভিন্ন ইউনিটের দলের নেতাদের নিয়ে ‘মূল্যায়ন সভা’ ডেকেছেন আজমত উল্লা। বিষয়টি ফেসবুকে পোস্টের মাধ্যমেও তিনি জানিয়েছেন। কয়েক দফায় হবে এই মূল্যায়ন সভা। সভাগুলোতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক; যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকির উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

মূল্যায়ন সভা বুধবার শুরু হয়ে শেষ হবে ৭ জুন। সভায় নেতাদের কাছে নির্বাচনে হারের কারণ জানতে চাইবেন আজমত উল্লা। এ বিষয়ে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে জয়ী হতে পারিনি কী কী কারণে, এসব কারণ নিয়েই নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হবে। আমাদের আর কী কী করা উচিত ছিল, যেগুলো করা হয়নি।’

মূল্যায়ন সভা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনের কোন নেতা কী ভূমিকা পালন করেছেন, সেসব বিষয় নিয়ে সভা ডাকা হয়েছে। নির্বাচনে কাজ করার জন্য নেতা-কর্মীদের আমরা শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাতে চাই।’ ঢাকা-১৭ আসনে আজমত উল্লাকে প্রার্থী করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোনো আলাপ হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে মোজাম্মেল হক বলেন, এমন কোনো আলোচনা হয়নি।