‘চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিপ্লব করে গেছেন তারেক মাসুদ’

ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌরসভার নুরপুর মহল্লায় তারেক মাসুদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তারেক মাসুদ ফাউন্ডেশন ও ভাঙ্গা নাগরিক সমাজ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তারেক মাসুদের মা নুরুন্নাহার মাসুদ
ছবি: প্রথম আলো

চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিপ্লব করে গেছেন তারেক মাসুদ। মানুষ তারেক মাসুদের মৃত্যু হলেও শিল্পকর্মের মাধ্যমে তিনি মানুষের মধ্যে অমর হয়ে আছেন। তাঁর শিল্পকর্ম যুগ যুগ ধরে মানুষকে আলোর পথ দেখাবে।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ফরিদপুরের ভাঙ্গা সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের মিলনায়তনে আজ রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তারেক মাসুদ ফাউন্ডেশন।

ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও ভাঙ্গা কাজী মাহবুব উল্লাহ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোসায়েদ হোসেন ঢালীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মিঞা মোহাম্মদ বে–নজীর আহমেদ, ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সুধিন কুমার সরকার, মাদারীপুরের শিবচর রিজিয়া বেগম মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বাবুল আশরাফ, সাংবাদিক ওবায়দুল আলম, ভাঙ্গা মহিলা কলেজের শিক্ষক দিলীপ দাস, লেখক শারমিন রহমান, সাংবাদিক অজয় দাস, ভাঙ্গা উপজেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুবাস মালো প্রমুখ।

অধ্যক্ষ বাবুল আশরাফ বলেন, তারেক মাসুদকে নিয়ে আগে যে আবেগ ছিল, তা দিনে দিনে ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রগতিশীল সংস্কৃতি আজ কোণঠাসা ও শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্যে আছে। সাংবাদিক ওবায়দুল আলম বলেন, তারেক মাসুদের মৃত্যুর পর দেশের বরেণ্য ব্যক্তিরা ভাঙ্গায় এসে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাঁরা ভাঙ্গায় তারেক মাসুদ ফিল্ম ইনস্টিটিউট হবে, জাদুঘর হবে নানা প্রতিশ্রুতির কথা বলেছিলেন। কিন্তু কেউ কথা রাখেননি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মিঞা মোহাম্মদ বে-নজীর আহমেদ বলেন, ‘চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিপ্লব করে গেছেন তারেক মাসুদ। দেশের চলচ্চিত্রই পারে মৌলবাদ প্রতিহত করতে।’ ভাঙ্গা উপজেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুবাস মালো বলেন, ‘জীবিত তারেক মাসুদের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তিনি যে শিল্পকর্ম আমাদের মধ্যে রেখে গেছেন, তাঁর মৃত্যু নেই। এ শিল্পকর্ম যুগ যুগ ধরে আমাদের আলোর পথ দেখাবে।’

তারেক মাসুদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে তারেক মাসুদ ফাউন্ডেশন। চারটি ক্যাটাগরিতে মোট ১২ শিশুকে পুরস্কৃত করা হয়। আলোচনা সভা শেষে পুরস্কার হিসেবে শিশুদের হাতে বই তুলে দেওয়া হয়। এর আগে ভাঙ্গা পৌরসভার নুরপুর মহল্লায় তারেক মাসুদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তারেক মাসুদ ফাউন্ডেশন ও ভাঙ্গা নাগরিক সমাজ। এ সময় তারেক মাসুদের মা নুরুন্নাহার মাসুদ উপস্থিত ছিলেন।

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট ‘কাগজের ফুল’-এর শুটিং লোকেশন দেখে ঢাকায় ফেরার পথে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মাইক্রোবাসে থাকা চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনীরসহ মোট পাঁচজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ‘মুক্তির গান’, ‘মাটির ময়না’, ‘আদম সুরত’, ‘রানওয়ে’সহ বিভিন্ন সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তারেক মাসুদ।

তারেক মাসুদ ভাঙ্গার নূরপুর গ্রামের মসিউর রহমান মাসুদ-নূরুননাহার দম্পতির ছেলে। তাঁর বাবা ভাঙ্গা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি (তারেক) সবার বড়। শৈশবে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় কয়েক দিন পড়ালেখা করেন। এরপর ভাঙ্গা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন তারেক মাসুদ।