রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক) আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাধারণ শিক্ষার্থী নির্যাতনসহ নানা অভিযোগে ২০ শিক্ষার্থীকে শাস্তি দিয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মধ্যে ১৯ জনকে হোস্টেল থেকে বহিষ্কার ও তাঁদের ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অপর এক ছাত্রকে শুধু তিরস্কার করা হয়েছে।
শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা–কর্মী বলে জানা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত হয়।
শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঙ্কাল–বাণিজ্য, হোস্টেলের আসন দখল, র্যাগিং, চাঁদাবাজি, অস্ত্র বহন, মাদক সেবন, মহিলা হোস্টেলে প্রবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে বক্তব্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের হুমকি ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলেও ওই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে ১৮ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং আরও ২০ জনকে সতর্ক করা হয়েছে। রামেক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
২০ শিক্ষার্থীর মধ্যে এক বছরের জন্য শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন এমবিবিএস ৬১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী বখতিয়ার রহমান, আরাফাত জুলফিকার, নকিবুল ইসলাম, ফারিয়া রেজোয়ানা, নাফিউ ইসলাম, ৬৩তম ব্যাচের শেখ সাকিব ও সোহম বিজয়। ছয় মাসের জন্য শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন ৬১তম ব্যাচের রাশিদ মোবারক, ৬২তম ব্যাচের হাসিবুল হাসান, আশিকুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, রাশেদুল ইসলাম, শোয়েব আকতার, জুহাইর আঞ্জুম, মাহফুজুর রহমান, ৬৩তম ব্যাচের কাজী হানিফ, পূর্ণেন্দু বিশ্বাস, ৩১তম বিডিএস ব্যাচের নূর এ জান্নাত ও ৩৩তম বিডিএস ব্যাচের ফারদিন মুনতাসির।
এ ছাড়া র্যাগিং ও শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগে এমবিবিএস ৬১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সজিব আকন্দকে তিরস্কার এবং অভিভাবকের উপস্থিতিতে তাঁর মুচলেকা আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে নাফিউ ইসলাম ও হাসিবুল হাসানের বিরুদ্ধে হোস্টেলের আসন দখল, র্যাগিং, চাঁদাবাজি, মহিলা হোস্টেলে প্রবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে বক্তব্য দেওয়া, জুহাইর আঞ্জুমের বিরুদ্ধে কঙ্কাল–বাণিজ্য, হোস্টেলের আসন দখল, র্যাগিং, চাঁদাবাজি, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর আক্রমণ ও অস্ত্র বহন, মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র বহন ও কঙ্কাল–বাণিজ্য ছাড়া অন্যসব অভিযোগ, অন্য শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অন্যান্য প্রায় সব অভিযোগই তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক খন্দকার ফয়সল আলম জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কলেজের ৩৪ শিক্ষক ও ৪৪ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি করা হয়। কিন্তু তদন্ত ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তাই শিক্ষকদের অভিযোগ তদন্তে অধ্যাপক পর্যায়ের আটজন শিক্ষক দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। এ ছাড়া আরও আটজন শিক্ষককে দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করা হয়। তদন্তে কমিটি ২০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পায়। এরপর বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় তোলা হয়।
অধ্যক্ষ বলেন, ‘যারা অভিযোগ তুলেছে, তারা আমার শিক্ষার্থী। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারাও আমার শিক্ষার্থী। তাই নির্মোহভাবে অভিযোগগুলোর তদন্ত করা হয়। তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। এই সুপারিশ একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় তোলা হলে সর্বসম্মতক্রমে সবাই তাদের শাস্তির ব্যাপারে একমত হন।’
অধ্যক্ষ ফয়সল আলম আরও জানান, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত আছে। যারা উপস্থিত এবং শাস্তির জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত, তাদের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হবে। শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।