গাজীপুরের শ্রীপুর

গভীর নলকূপ থেকে তিন বছর ধরে বের হচ্ছে গরম পানি 

দৈনন্দিন কাজে রান্নাবান্না থেকে শুরু করে গোসল ও শৌচাগারে নলকূপটির পানি ঠান্ডা না করে ব্যবহারের উপায় নেই।

গাজীপুরের শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি গিলারচালা এলাকায় এ নলকূপ থেকে গরম পানি বের হয়
ছবি: প্রথম আলো

২৬০ ফুট গভীর নলকূপ থেকে বৈদ্যুতিক মোটরে উঠছে গরম পানি। এই পানিতেই চলছে দৈনন্দিন কাজ। বিচিত্র ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুরের গিলারচালা গ্রামে। ওই গ্রামের শাহাব উদ্দিনের বাড়ির একটি বৈদ্যুতিক মোটরচালিত নলকূপ থেকে তিন বছর ধরে এমন গরম পানি বের হচ্ছে।

যেকোনো সময় বৈদ্যুতিক মোটর চালু করার সঙ্গে সঙ্গে গরম পানি বের হওয়া শুরু হয়। শাহাব উদ্দিনের পরিবারের সদস্য ও বাড়ির ভাড়াটিয়া মিলিয়ে ১৩০ জন দৈনন্দিন কাজে নলকূপটির পানির ওপর নির্ভরশীল। শীতের দিনে সুবিধাজনক হলেও গরমের দিনে এই পানি ব্যবহার করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে এই পানি ব্যবহার করতে করতে ওই পরিবারের সদস্যরা এখন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, নলকূপটির পাশেই বড় বড় ড্রাম ও বালতি রাখা। শাহাব উদ্দিনের বাড়ির প্রত্যেক শৌচাগারের ভেতর পানির ট্যাপ থাকার পরেও অতিরিক্ত বালতিতে পানি জমিয়ে রাখা হয়েছে। জানা গেল, গরম পানি ব্যবহারের উপযোগী করতে শীতল করার জন্য এসব বালতিতে পানি দীর্ঘক্ষণ জমিয়ে রাখা হয়।

নলকূপটি যেখানে স্থাপন করা হয়েছে, এর পাশেই প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের ডাইং প্ল্যান্টের অবস্থান। পানি ঠিক কতটা গরম, তা দেখাতে বৈদ্যুতিক মোটর চালু করেন শাহাব উদ্দিন। সেখান থেকে তাৎক্ষণিক পাওয়া পানিতে হাত রেখে ঘরের গিজারের পানির মতো গরম অনুভূত হয়েছে।

বাড়ির মালিক শাহাব উদ্দিন জানান, প্রায় ১৮ বছর আগে বাড়িতে তিনি ২২০ ফুট গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানি ব্যবহার করছিলেন। পাঁচ বছর আগে নলকূপের পানির অস্বাভাবিক রং ধরা পড়ে। পরে এই নলকূপের ১০ ফুট দূরত্বে আরও একটি নলকূপ স্থাপন করেন। সেই নলকূপটির গভীরতা ২৬০ ফুট। এই নলকূপে তিন বছর আগে থেকে গরম পানি আসা শুরু করে।

প্রথম আলোকে শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘নলকূপ থেকে গরম পানি বের হওয়ার এমন ঘটনা কোথাও দেখিনি। আশপাশের সবাই অবাক। এটি কেন ঘটছে, তাও আমরা জানি না। গরম পানি ঠান্ডা করে ব্যবহার করতে হচ্ছে। এই পানি পান করতে গিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হবে কি না, তা–ও জানি না।’

ওই বাড়ির কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দৈনন্দিন কাজে রান্নাবান্না থেকে শুরু করে গোসল ও শৌচাগারে নলকূপের পানিকে ঠান্ডা না করে ব্যবহারের উপায় নেই। তাই তাঁরা প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা বালতি ও অন্যান্য পানির পাত্র কিনে নিয়েছেন। কেউ কেউ গোসলের জন্য ফ্রিজের বরফ বালতির পানিতে দিয়ে তাৎক্ষণিক পানি ঠান্ডা করে থাকেন। এই পানিতে গোসল করার পর শরীরে কিছুটা খসখসে ভাব অনুভূত হয় বলে জানান বাসিন্দারা।

বাড়ির অপর বাসিন্দা মো. কাউসার বলেন, ‘গরম পানির কারণে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। গরম পানির এই দুরবস্থা নিরসনের উপায় তো আমাদের কাছে নাই। আমাদের বাধ্য হয়ে বিকল্প উপায়ে এই পানিই ব্যবহার করতে হচ্ছে।’

নলকূপ থেকে গরম পানি বের হওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক হিসেবে উল্লেখ করেছেন পরিবেশকর্মী খোরশেদ আলম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এই পানি পরীক্ষা করে দেখা উচিত। বিষয়টি অবগত করা হলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর শ্রীপুরের সহকারী প্রকৌশলী মো. ফয়সাল খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাটির নিচ থেকে গরম পানি বের হওয়ার এমন ঘটনার কথা আগে কখনো শুনিনি। বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা দরকার। আমি শিগগির সেখানে যাব।’