সুনামগঞ্জে গতকাল সোমবারের বৃষ্টিতে পাঁচটি উপজেলায় আবার বন্যা দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে নেমেছে উজানের পাহাড়ি ঢল। এ কারণে সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় অনেক রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। শহরের সুরমা নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যার পানি ঢুকেছে।
মূলত উজানে বেশি বৃষ্টি হলে সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল নেমে পরিস্থিতির অবনতি হয়। ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছিল ৩১৩ মিলিমিটার। একই সময়ে সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছিল ১৭০ মিলিমিটার। এর পরের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয় ৩০০ মিলিমিটার। ঢলের এসব পানি আর তুমুল বৃষ্টির কারণে আবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সুরমা নদীতীরবর্তী সড়ক, বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। শহরের লঞ্চঘাট, জলিলপুর, মল্লিকপুর, উত্তর আরপিননগর, তেঘরিয়া, নবীনগর, ওয়েজখালী, মল্লিকপুর ও বড়পাড়া এলাকা এখন জলাবদ্ধ অবস্থায় আছে।
পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, শহরে নদী ও হাওর–তীরবর্তী এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকায় রাস্তাঘাট, দোকানপাট ও বাড়িঘরে পানি আছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ঢলের পানিতে তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের তিনটি এলাকা প্লাবিত হওয়ায় সড়কটি দিয়ে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ছাতক উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর, কালারুকা, নোয়ারাই ও চরমহল্লা ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। দোয়ারাবাজার উপজেলায় বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকায় পানি বাড়ছে সুনামগঞ্জের যাদুকাটা, পাটনাই, রক্তি, বৌলাই, কুশিয়ারা, নলজুর, চেলা, চলতি, খাসিয়ামারাসহ সব নদীতে।
সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, গ্রাম থেকে শহরে আসার সড়কটি পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন নৌকায় আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। তবে আজ সকালে বৃষ্টি কম হয়েছে। সুনামগঞ্জ এবং এর উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হওয়ার কারণেই মূলত পানি বৃদ্ধি পায়। বৃষ্টি হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
সুনামগঞ্জে গত ১৬ জুন থেকে বন্যা দেখা দেয়। একপর্যায়ে পুরো জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। প্লাবিত হয় জেলার এক হাজার ১৮টি গ্রাম। এতে আট লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। অসংখ্য ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়। মানুষের বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে আশ্রয় নেয় ২৫ হাজার পরিবার। ২৩ জুনের পর থেকে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে মানুষ বাড়িঘরে ফেরেন। আবার কেউ কেউ এখনো বাড়িতে ফিরতে পারেননি। এর মধ্যেই আবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করেছে।