সড়কে দিনরাত বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে থাকে।
সড়কের পাশে খালি জায়গায় অস্থায়ী দোকানপাট বসানো হয়েছে।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার প্রাচীন বাজারটি হলো নান্দাইল পুরাতন বাজার। ঐতিহ্যবাহী বাজারটির সড়কগুলোর পাশে নেই ফুটপাত। সড়কের পাশে যতটুকু খালি জায়গা আছে সেখানে বসেছে অস্থায়ী দোকানপাট। দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে হচ্ছে ক্রেতা, ব্যবসায়ী ও পথচারীদের। এ সমস্যা সমাধানে নেই কোনো উদ্যোগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, নান্দাইল পুরাতন বাজারের ভেতর দিয়ে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলা থেকে একটি সড়ক ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সড়কটি হাসপাতাল সড়ক নামে পরিচিত। এ সড়কে দিনরাত বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে থাকে। ফলে এটি একটি ব্যস্ততম সড়ক।
নান্দাইল পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা যয়, গত বছর হাসপাতাল সড়কসহ বাজারের আরও একটি সড়ক পাকা করা হয়েছে। কিন্তু পথচারীদের জন্য সড়কের কোনো প্রান্তে ফুটপাত নির্মাণ করা হয়নি। এমনকি রাখা হয়নি নর্দমার নালা। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি সড়কের পশ্চিম পাশের নিচু জায়গায় গিয়ে জমে থাকে। পানি না শুকানো পর্যন্ত থকথকে কাদাযুক্ত অবস্থায় থাকে। এ ছাড়া সড়কের দুই পাশে ইজিবাইক দাঁড় করিয়ে রাখায় প্রতিদিন সড়কে লেগে থাকে যানজট।
পথচারীদের জন্য সড়কের কোনো প্রান্তে ফুটপাত নির্মাণ করা হয়নি। এমনকি রাখা হয়নি নর্দমার নালাও।
নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মোস্তাফিজুর রহমান (৫৫) বলেন, ‘নান্দাইল বাজারে চলাচল করার জন্য ফুটপাতের ব্যবস্থা না রাখা পথচারীদের প্রতি কর্তৃপক্ষের অবহেলার শামিল। আমাদের মতো যাঁরা বাইরে থেকে বাজারে আসেন, তাঁদের বাজারে চলাচল করতে ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
বাজারটির ধানমহালে একটি সড়ক রয়েছে। এ সড়কের পশ্চিম পাশে রয়েছে ধান-চালসহ নানা পণ্য বিক্রির বড় বড় পাইকারি প্রাচীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এ সড়কের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে বসেছে কাঁচাবাজারের দোকানপাট। প্রতিদিন ক্রেতারা সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে বাজার-সদাই করেন। অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ধান-চালসহ নানা ধরনের পণ্য আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। এসব পণ্য গ্রামীণ হাটবাজার থেকে আসা পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয়ে থাকে। পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করার সময় এ সড়কে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান দাঁড়াতে হয়। পণ্য ওঠানামা করার সময় ট্রাক অপেক্ষমাণ থাকায় ধানমহাল সড়ক দিয়ে চলাচল প্রায় সময় বন্ধ থাকে।
কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কাঁচাবাজারের দোকানগুলো নির্দিষ্ট সরকারি শেডে স্থানান্তর করা হলে সড়কের পাশে খালি জায়গা দিয়ে পথচারী ও ছোটখাট যানবাহন অনায়াসে চলাচল করতে পারে। এতে তাঁদের ব্যবসা পরিচালনা করতে কোনো সমস্যা হবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারের ভেতরে সরকারি জমিতে ১৯৯৪ সালে ৩০টির বেশি পাকা শেড নির্মাণ করা হয়েছিল, কিন্তু এসব পাকা শেড দখল হয়ে গেছে। নির্মাণের পর কোন শেডে কী ধরনের পণ্যের দোকান বসানো হবে তা কখনো নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। ফলে যে যঁার মতো প্রভাব খাঁটিয়ে শেডগুলো দখল করে নিয়েছে।
এ ছাড়া বাজারের পুরোনো মাছমহাল সড়ক, বাসস্ট্যান্ড সড়ক, নদীর পাড় সড়কে পথচারীদের জন্য আলাদা কোনো ফুটপাত নেই। সড়কের পাশে খালি জায়গায় অস্থায়ী দোকানপাট বসানো হয়েছে। এ ছাড়া সড়কের কিনারে ইজিবাইক ও রিকশা দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট এখন নান্দাইল পৌরবাসীর ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
নান্দাইল পুরাতন বাজারটি পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। সেই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. রফিকুজ্জমান ভূঁইয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোর কাছে পথচারীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, সড়ক পাকা করার সময় দুই পাশে নালা নির্মাণের চিন্তাভাবনা ছিল। সেই নালার ওপর স্লাব বিছিয়ে পথচারীদের জন্য ফুটপাত তৈরির পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু সেটির অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
যানজট কমিয়ে পথচারীদের স্বাভাবিক চলাচলের ক্ষেত্রে একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই উদ্যোগ কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।
এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরুণ কৃষ্ণ পাল প্রথম আলোকে বলেন, ভূমির নকশা ও রেকর্ডপত্র যাচাই করে সড়কগুলো কতখানি প্রশস্ত ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সড়কের জমি কারও দখলে চলে গেলে তা উদ্ধার করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে।