রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় একজন ‘রাজাকার’কে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানেরা। স্থানীয় সংসদ সদস্য এনামুল হক ওই ব্যক্তির পক্ষে আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দিয়েছেন। ওই ব্যক্তির নাম গেজেট থেকে বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ‘রাজাকার’ হিসেবে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম ইসমাইল হোসেন গাইন। তিনি বাগমারার শ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের মকিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তাঁর বেসামরিক গেজেট নম্বর-২২৬৩।
ইসমাইল হোসেন গাইনকে ডিও লেটার দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সংসদ সদস্য এনামুল হক। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের সঙ্গে কথা বলে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তিনি ডিও লেটার দিয়েছেন। তিনি শুধু ইসমাইলের জন্য ডিও দেননি, বাগমারা থেকে অন্য যাঁরা আবেদন করেছিলেন, তাঁদের সবাইকেই ডিও লেটার দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়েজ উদ্দিন মিলমালত। এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান আলী, আবদুস সালাম, ইউসুফ আলী খন্দকার বুলবুল; বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান খোদা বক্স, ফজুলর রহমান, জনাব আলী, আজাজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়েজ উদ্দিন মিলমালত বলেন, ইতিমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা জীবন দিয়ে একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থান্বেষী কিছু নেতার কারণে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন, এমন কিছু ব্যক্তিকে সম্প্রতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাজশাহীর বাগমারায় সম্প্রতি এমন একটি ঘটনা ঘটেছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়েজ উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাগমারায় অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন ‘রাজাকার’ ইসমাইল হোসেন গাইন। তাঁর নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ায় স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিত পরিবারগুলোর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানহানি হয়েছে। সর্বশেষ ইসমাইলকে ডিও লেটার দেন সংসদ সদস্য এনামুল হক।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়েজ উদ্দিন আরও বলেন, বাগমারায় রাজাকার বাহিনীর প্রধান ইব্রাহিম হোসেনের নেতৃত্বে ইসমাইলসহ রাজাকাররা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ইসমাইল হোসেন মৃধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়েজ উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মছির উদ্দিন গাইন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শমসের উদ্দিন, ইউসুফ বকসের বাড়িতে আগুন দেন ও লুটপাট করেন। তাঁরা বাগমারার বিভিন্ন এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন চালান। তিনি বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। রক্তের বিনিময়ে আমরা এ ভূখণ্ড পেয়েছি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকতে একজন রাজাকারকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করা অত্যন্ত অমর্যাদাকার। আমরা অবিলম্বে রাজাকার ইসমাইলের গেজেট বাতিলের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
অভিযোগের বিষয়ে ইসমাইল হোসেন গাইন প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলী খাজার সঙ্গে তিনি যুদ্ধ করেছেন। তবে তাঁর ভারতীয় কোনো প্রশিক্ষণ নেই। বাগমারার ভবানীগঞ্জে একটি যুদ্ধেই তিনি অংশ নিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, দেড় বছর ধরে তিনি ভাতা পাচ্ছেন। জামুকাতেও তাঁর কাগজপত্র ঠিক আছে। স্থানীয়ভাবে তাঁর ছেলের সঙ্গে বিরোধের জেরে তাঁর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করা হচ্ছে।
যুদ্ধকালীন কামান্ডার আলী খাজা এম এ মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, যুদ্ধের সময় তাঁর সঙ্গে অনেকে যুদ্ধ করেছেন। তিনি এক ট্রাক অস্ত্র জমা দিয়েছেন। সবার কথা মনে নেই। তবে ইসমাইল দাবি করেছেন, তিনি তাঁর (আলী খাজা) সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। তাঁর নাম রাজাকারের তালিকাতেও নেই। যাচাই–বাছাইয়ের সময় কেউ আপত্তি করেননি। তাই তাঁর নাম পাস করে দিয়েছেন। তিনি এখন ভাতা পাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের দলাদলির কারণে এখন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে।