চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত আরও দুই ব্যক্তির লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে এ লাশ দুটি হস্তান্তর করা হয়। এ নিয়ে নিহত ৫১ জনের মধ্যে ৩৯ জনের লাশ শনাক্ত করা হলো। এর আগে শনাক্ত করা যায়নি এমন ১৪টি দেহাবশেষের মধ্যে তিনটির ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পায় পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক। তিনি এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। নতুন শনাক্ত করা ব্যক্তিরা হলেন মো. মাঈন উদ্দিন (২৩) ও মো. জুয়েল রানা (৩১)। মাঈন উদ্দিনের বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার সিরাজপুর গ্রামে। জুয়েল রানার বাড়ি একই জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহজাদপুর গ্রামে।
মাঈন উদ্দিনের লাশ গ্রহণ করেছেন তাঁর বাবা হেদায়েত উল্ল্যাহ এবং জুয়েল রানার লাশ গ্রহণ করেছেন তাঁর স্ত্রী জেসমিন আক্তার।
গত ৪ জুন রাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫১টি দেহাবশেষ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৯ জনকে প্রথমেই শনাক্ত করা গেছে। চেহারা বিকৃত হয়ে যাওয়ায় ২২টি দেহাবশেষের ডিএনএ সংগ্রহ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়। এর মধ্যে গত ৭ জুলাই আটটি লাশের ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল আসায় শনাক্ত করা আটজনকে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অবশিষ্ট ১৪টি দেহাবশেষের পরিচয় তখনো শনাক্ত করা যায়নি।
সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক প্রথম আলোকে বলেন, বিএম কনটেইনার ডিপোর পুড়ে যাওয়া ১৪ দেহাবশেষের মধ্যে ডিএনএ পরীক্ষায় তিনটির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে দুজন মাঈন উদ্দিন ও জুয়েল রানা। অপর দেহাবশেষটি আগে শনাক্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা আবুল হাসেমের লাশের খণ্ডিতাংশ। সে হিসাবে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫০।
আজ বিকেলে লাশ গ্রহণের পর একটি মিনি ট্রাকে করে মাঈন উদ্দিনের লাশ তাঁর বাবা হেদায়েত উল্ল্যাহ এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে জুয়েল রানার লাশ তাঁর স্ত্রী জেসমিন আক্তার নিয়ে গেছেন।
মাঈন উদ্দিনের বাবা হেদায়েত উল্ল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে বিএম কনটেইনার ডিপোতে চাকরিরত অবস্থায় মারা গেছেন। সব তথ্যপ্রমাণ থাকার পরও কর্তৃপক্ষের হতাহতের তালিকায় তাঁর ছেলের নাম নেই। তিনি অনেকবার যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাঁদের কথা শুনতে চায়নি। এখন লাশ শনাক্ত হয়েছে। ছেলের লাশ যে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাবেন, সে টাকাও নেই বলে কেঁদে ফেলেন তিনি।
হেদায়েত উল্ল্যাহ বলেন, ‘আমার দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে মাঈন উদ্দিন ছিল সবার বড়। বিয়ে করাব বলে মেয়ে ঠিক করে রেখেছিলাম। সে আশা পূরণ হলো না। অ্যাম্বুলেন্সচালক লাশ বাড়ি নিতে ভাড়া চান ২৫ হাজার টাকা। এত টাকা নেই। তাই ১০ হাজার টাকায় পিকআপ ভাড়া করে লাশ নিয়ে যাচ্ছি।’
জুয়েল রানার স্ত্রী জেসমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরাও ক্ষতিপূরণ পাননি। লাশ বাড়ি নিয়ে দাফনের পর কর্তৃপক্ষের কাছে আবারও আসবেন তাঁরা।
জানতে চাইলে বিএম কনটেইনার ডিপোর উপমহাব্যবস্থাপক নুরুল আখতার প্রথম আলোকে বলেন, লাশ শনাক্ত না হওয়ায় আগে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। এখন লাশ শনাক্ত হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনার পর তাঁদের নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।