তলিয়ে গেছে কক্সবাজার পৌরসভার দক্ষিণ কুতুবদিয়াপাড়া। আজ দুপুরে
তলিয়ে গেছে কক্সবাজার পৌরসভার দক্ষিণ কুতুবদিয়াপাড়া। আজ দুপুরে

কক্সবাজার

ডুবে আছে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট, কষ্টে পানিবন্দী মানুষ

টানা চার দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কক্সবাজারের ৯টি উপজেলার ১৭০টির বেশি গ্রামের অন্তত দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বন্যার পানিতে ডুবে আছে কয়েক শ পানের বরজ, শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি, সবজিখেত, কয়েক একরের আমন বীজতলা। বন্যার পানি ঢুকে শতাধিক মৎস্য ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। কক্সবাজার পৌরসভা, উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে পাহাড়ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী, চকরিয়ার মাতামুহুরি ও উখিয়ার রেজু নদ–নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় দুই তীরের অসংখ্য মানুষের ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে ডুবে রয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, নাজিরারটেক এলাকায় পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়িও হাঁটুসমান পানিতে ডুবে আছে। এসব এলাকায় খাবার ও সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য মতে, ভারী বর্ষণ ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার ৪৬টি ইউনিয়নের প্রায় ১৭০টি গ্রামে ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

কক্সবাজারের উখিয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১০ হাজার মানুষের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৯ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটতে পারে। প্রাণহানি থেকে রক্ষার জন্য পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে বসবাসকারী লোকজনকে সরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

উখিয়া হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, তাঁর ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী আছেন। পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে আছেন আরও দুই হাজার মানুষ। উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে পাহাড়ধসের ঘটনায় একজন রোহিঙ্গা শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

উখিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন বলেন, বন্যার পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত ফসল, বীজতলা, পানের বরজ নষ্ট হয়েছে। তালিকা তৈরি হচ্ছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা শিবির ও উখিয়ার বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে আসতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে।

বাঁকখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের মুক্তারপাড়া, চান্দরপাড়া, নয়াপাড়া, খরুলিয়াসহ কয়েকটি গ্রামে কয়েক শ ঘরবাড়ি পানির নিচে ডুবে আছে। বেশ কিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, অধিকাংশ ঘরে রান্নাবান্না বন্ধ থাকার খাবারের সংকট চলছে। ঘরের ভেতর পানি ঢুকে পড়ায় নারী ও শিশুদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে কক্সবাজার পৌরসভার টেকপাড়া, পেশকারপাড়া, বড় বাজার, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, সৈকতপাড়া, হোটেল–মোটেল জোনেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে নালা-নর্দমা পরিষ্কার ও বন্যার্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।