সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় তিনটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আবদুল মালেক ওরফে মালেকুজ্জামানকে (৪৭) গ্রেপ্তার করেছে র্যাবের একটি দল। গতকাল মঙ্গলবার রাতে র্যাব-৬–এর সাতক্ষীরা ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল সদর উপজেলার কুশখালী সীমান্ত এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
আজ বুধবার দুপুরে র্যাব সাতক্ষীরা ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর জে এম গালিব হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। গ্রেপ্তার আবদুল মালেক সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা সদরের তুলশিডাঙ্গার বাসিন্দা। শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলায় চার বছর, ওই ঘটনায় অস্ত্র মামলায় সাত বছর ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয়েছে তাঁর। র্যাবের দাবি, ১২ বছর ধরে পালিয়ে ছিলেন মালেক।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় গত ১৮ এপ্রিল অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের দুটি মামলায় বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলামসহ (হাবিব) চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপর ৪৪ জনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এর মধ্যে আবদুল মালেক সাত বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।
র্যাব জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা জানতে পারে, সদর উপজেলার সীমান্তের কুশখালী সীমান্ত এলাকায় আবদুল মালেক তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান করছেন। পরে র্যাব সাতক্ষীরা ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় সেখান থেকে মালককে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ সকালে তাঁকে কলারোয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ, দলীয় নেতা-কর্মী ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার এক নারীকে দেখতে ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যান। সেখান থেকে যশোরে যাওয়ার পথে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে তাঁর গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলাকারীরা শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি করেন এবং বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। তবে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। এ সময় বহরে থাকা ১৫ থেকে ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। হামলায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে থাকা ১২ নেতা-কর্মী আহত হন।
এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দীন বাদী হয়ে কলারোয়া যুবদলের তৎকালীন সভাপতি আশরাফ হোসেনসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৭০-৭৫ জনকে আসামি করে কলারোয়া থানায় মামলা করতে গেলে মামলাটি রেকর্ড করেনি পুলিশ। এ ঘটনার ১২ বছর পর ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর সাতক্ষীরা আদালতে একটি মামলা করা হয়। আদালত কলারোয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করার আদেশ দেন।
সাতক্ষীরা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল লতিফ জানান, এ ঘটনায় তিনটি মামলার মধ্যে একটিতে ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ৫০ আসামির ৪ থেকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড হয়। এ মামলায়ও পলাতক আবদুল মালেকের সাজা হয়। অপর দুটি মামলায় প্রতিটিতে চারজনের যাবজ্জীবন ও অন্য ৪৪ আসামিকে প্রতিটিতে সাত বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এর মধ্যে পলাতক ৯ আসামিও রয়েছেন। পলাতক আসামিদের মধ্যে মালেকসহ দুজন গ্রেপ্তার হলেন।