ব্যানার নামানো নিয়ে এমপ্লয়িজ লীগের সদস্যদের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন যুবদল নেতা–কর্মীরা। গতকাল রাতে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে
ব্যানার নামানো নিয়ে এমপ্লয়িজ লীগের সদস্যদের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন যুবদল নেতা–কর্মীরা। গতকাল রাতে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে

নামের শেষে ‘লীগ’ থাকায় জামায়াতপন্থীদের সংগঠনের ব্যানার নামালেন যুবদল নেতা–কর্মীরা

বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজশাহী রেলস্টেশনে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগ’–এর পক্ষ থেকে একটি ব্যানার টানানো হয়েছিল। সংগঠনের নামের শেষে ‘লীগ’ থাকায় সেই ব্যানার নামিয়ে পা দিয়ে মাড়িয়েছেন যুবদলের নেতা-কর্মীরা। বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন সংগঠনটির সমর্থকদের সঙ্গে। গতকাল শনিবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগ’ বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত একটি সংগঠন। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন জামায়াতে ইসলামীর একটি সহযোগী সংগঠন। রেলওয়েতে কর্মরত জামায়াতের কর্মী-সমর্থকেরাই রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগ করেন। যুবদল নেতারা কথাটি বুঝতেই চাননি বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সদস্যরা।

ব্যানার নামিয়ে ফেলার ওই ঘটনা রাজশাহী মহানগর যুবদলের সদস্য আরিফুজ্জামান সোহেলের ফেসবুক থেকে লাইভ করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবদলের নেতা–কর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন যে রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগ আসলে জামায়াতের কর্মী-সমর্থকদের সংগঠন। কিন্তু তাঁরা কোনোভাবেই তা মানছেন না। ‘লীগ’ শব্দ থাকায় তাঁরা বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

ভিডিওতে দেখা যায়, বিজয় দিবস উপলক্ষে টানানো ব্যানারটি নামিয়ে ফেলা হলে স্টেশনমাস্টার ময়েন উদ্দিন যুবদল নেতা আরিফুজ্জামান সোহেলসহ নেতা-কর্মীদের বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর যাঁরা রেলে চাকরি করেন, তাঁদের সংগঠন এমপ্লয়িজ লীগ।’ তখন এক যুবদল কর্মী বলেন, ‘তাহলে এই যে লীগ। লীগ মানে জামায়াত? তাহলে আওয়ামী লীগ মানে জামায়াত?’ আরেকজন বলেন, ‘এই সংগঠন শুধু এখানেই আছে না সব জায়গায়?’

এ সময় আমিনুল ইসলাম নামের এক ট্রেনচালক বলেন, ‘এই সংগঠন সারা দেশেই আছে। এটা ট্রেড ইউনিয়নের নাম। এই লীগ কিন্তু আওয়ামী লীগ না।’ তখন এক যুবদল কর্মী বলেন, ‘জামায়াতের কোনো জায়গায় “লীগ” আছে বলে আমরা জানি না। জামায়াতের হলে জামায়াতই লেখা থাকবে।’ তখন আরেকজন বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেন, ‘লীগ শব্দের অর্থ দল। এটা আওয়ামী লীগ নয়।’ কিন্তু যুবদলের কর্মীরা তা মানতে পারছিলেন না।

এক যুবদল কর্মী ওই ব্যানারের ওপর উঠে পা দিয়ে লাথি দিতে থাকেন ‘লীগ’ শব্দটিকে। আমিনুল ইসলাম ও ময়েন উদ্দিন বোঝানোর চেষ্টা করলে যুবদল কর্মীরা তাঁদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে যুবদল নেতা আরিফুজ্জামান বলেন, ‘এই লীগ যদি জামায়াতেরও হয়, তাহলে তাদের সংগঠনের নাম পরিবর্তন করতে হবে।’ এরপর তাঁরা সেখান থেকে চলে যান।

যোগাযোগ করা হলে ট্রেনচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সারা জীবন জামায়াত করেও কাল আওয়ামী লীগ করার অভিযোগে মাইর খেতে লাগছিলাম। তারা যে ধরনের আচরণ করেছে, সেটা তো ভিডিওতেই দেখা যাচ্ছে। বেইজ্জতি হয়ে যাচ্ছিলাম। তাদের তো জানতে হবে।’ তিনি জানান, আরিফুজ্জামান সোহেলসহ যুবদলের কয়েকজন রেলস্টেশনে থাকা হোটেলটি ইজারা নিয়েছেন। তাঁরা স্টেশনে এসে এমপ্লয়িজ লীগের ব্যানার দেখে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন।

জানতে চাইলে যুবদল নেতা আরিফুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘একটা ভুল–বোঝাবুঝি হয়ে গিয়েছিল। পরে জামায়াতের এক নেতা আমাকে ফোন করে বলেছেন যে এটা তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের সংগঠন। আমরা বলেছি, “লীগ” শব্দ রাখা যাবে না। সংগঠনের নাম পরিবর্তন করতে হবে।’

বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগের রাজশাহীর ওপেন লাইন শাখার সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সংগঠনের নাম পরিবর্তনের জন্য ইতিমধ্যে শ্রম অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু নাম পরিবর্তন খুব সহজ কাজ নয়। এর জন্য তো সময়ের প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, ব্যানার নামানো নিয়ে যা হয়েছে, সেটা বিএনপি নেতাদের জানিয়েছেন। পাশাপাশি এমপ্লয়িজ লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিকেও জানিয়েছেন।