সংরক্ষিত নারী আসনে শাম্মী আহমেদের পক্ষে মনোনয়ন ফরম কিনলেন নেতারা

শাম্মী আহম্মেদ
ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন দলটির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ। আজ বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর পক্ষে ফরম সংগ্রহ করেন বরিশালের হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পণ্ডিত শাহাবুদ্দিন আহমেদ ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ। শাম্মী আহমেদের ভাই মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাব আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শাম্মীর সমর্থক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শাম্মী আহমেদের বাবা প্রয়াত সংসদ সদস্য মহিউদ্দীন আহমেদ ছিলেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শাম্মী আহমেদ বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করেন। দলের জন্য ও দেশের জন্য কাজ করার চিন্তা থেকেই তাঁর পক্ষে আমরা বরিশাল বিভাগে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি।’

সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন শাম্মী আহমেদ। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে সংসদ সদস্য পংকজ নাথ ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। পরে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় শাম্মীর প্রার্থিতা বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। নির্বাচন কমিশন ও হাইকোর্টে আপিলেও রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশ বহাল থাকে। এরপর শাম্মী আহমেদ চেম্বার আদালতে লিভ টু আপিল করলে সেখানেও তাঁর প্রার্থিতা বাতিলের আদেশ বহাল থাকায় তিনি আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। এই আসনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন পংকজ নাথ।

সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য পদে শাম্মী আহমেদের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। বুধবার সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে

শাম্মী আহমেদের স্বজন ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সৈয়দ মনির প্রথম আলোকে বলেন, শাম্মী আহমেদ গত বছরের ২৭ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়া সরকারের কাছে তাঁর নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের আবেদন করেন। আবেদনটি গত ২২ ডিসেম্বর অনুমোদিত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া দূতাবাস থেকে তাঁর নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুরের তথ্যও ইতিমধ্যে হাতে এসেছে। ফলে এখন তাঁর সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়ায় কোনো আইনি বাধা নেই।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সংরক্ষিত আসনে ফরম বিক্রি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এই ফরম বিতরণ কার্যক্রম চলবে। এ সময়ের মধ্যে জমাও দেওয়া যাবে। মঙ্গলবার প্রথম দিনে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা থেকে ৫৬ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে বরিশাল জেলা থেকে ১৫ জন, পটুয়াখালী জেলার ১১ জন, পিরোজপুর জেলায়ও ১১ জন, বরগুনায় ৯ জন, ভোলায় ৬ ও ঝালকাঠির ৪ নারী নেতা ফরম সংগ্রহ করেন।

একাদশ সংসদে বরিশাল বিভাগের ২১টি সংসদীয় আসন থেকে চারজন সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ছিলেন।

এর মধ্যে বরিশাল জেলায় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ, সাবেক সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা মীর, বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের বর্তমান নারী ভাইস চেয়ারম্যান ফারজানা বিনতে ওহাব, রোকেয়া বেগম, মোর্শেদা বেগম, আঞ্জুমান সালাহ উদ্দিন, পারভীন সুলতানা, দীপিকা রানী সমদ্দার, শাহনাজ পারভীন, আফরোজা কবির, এঞ্জেলা বৈশাখী, খাদিজা সিদ্দিকা, আইরিন সুলতানা, রেহানা জামান ও তানিয়া আরজুমান্দ; পটুয়াখালী জেলায় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন, নিউ নিউ খেইন, জেবুন্নাহার, কাজী কানিজ সুলতানা, তানজিলা খালেক, নাসিমা বেগম, খাইরুন্নাহার লাকী, সুরভী, নাজনীন নাহার রশীদ, সাদিয়া শারমিন, সালমা বেগম ও সাহিনা পারভীন।

পিরোজপুর জেলায় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন কাজী রুহিয়া বেগম, ডরথী রহমান, রোকেয়া বেগম, মাহফুজা খাতুন, কানিজ ফাতেমা, রোজিনা নাসরিন, শাহনাজ পারভীন, মমতাজ খানম, লাবণী আক্তার ও লুবনা আহমেদ।

বরগুনা জেলায় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন মেহেরুন নেছা, হোসনেয়ারা রানী, ফারজানা আলম, ফাতিমা পারভীন, মাহেনুর বেগম, রোজিনা নাসরিন, মিতু আক্তার, ফারজানা সুমী ও মাধবী দেবনাথ; ভোলা জেলায়, অঞ্জু রানী, ইফফাৎ ওবায়েদ, খাদিজা আক্তার, ফাতেমা বেগম, সাফিয়া খাতুন, খালেদা বাহার এবং ঝালকাঠি জেলায়, ফাতিনাজ ফিরোজ, ইয়াসমিন আক্তার, শারমিন মৌসুমী ও রেদওয়ানা আলম।

দলীয় ফরম বিক্রির বরিশাল বিভাগীয় বুথের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য বলরাম পোদ্দার প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একাদশ সংসদে বরিশাল বিভাগের ২১টি সংসদীয় আসন থেকে চারজন সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ছিলেন।

সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৫০টি। ইতিমধ্যে ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাঁদের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত আসনে সদস্য নির্বাচনের ক্ষমতা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন। ফলে আওয়ামী লীগ তাদের দলের এবং স্বতন্ত্রদের মিলে ৪৮ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য দিতে পারবে। বাকি দুটি আসনে নারী সংসদ সদস্য দিতে পারবে সংসদের বিরোধ দল জাতীয় পার্টি (জাপা)।