বগুড়া সদর থানা পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায়
বগুড়া সদর থানা পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায়

বগুড়ায় সদর থানা ভবন ও ফাঁড়ি পুরোটাই ধ্বংসস্তূপ, লুট হয়েছে অস্ত্র

বগুড়া শহরজুড়ে বাতাসে এখন পোড়া গন্ধ। রাস্তায় পড়ে আছে ছাই। আগুনে পুড়ে গেছে সদর থানা ভবন, সদর সার্কেল অফিস ও সদর পুলিশ ফাঁড়ি। লন্ডভন্ড পুলিশ প্লাজা। পাশের অনেক দোকানেও লুট হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার শহরে ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার খবরে গত সোমবার বগুড়া শহরে বিজয় মিছিল বের করা হয়। এ সময় থানা-ফাঁড়ি ও পুলিশ প্লাজায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ গুলি, কাদাঁনে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে। এতে একজন অজ্ঞাতনামা (৩০) ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

সোমবার সন্ধ্যার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় বগুড়া সদর থানা-পুলিশের সদস্যরা পুলিশ লাইনসে আশ্রয় নেন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা দুইটা পর্যন্ত সদর থানা পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। এক দিন আগেই বগুড়া শহরের সবগুলো ফাঁড়ি থেকে পুলিশ প্রত্যাহার করে সদর থানায় নেওয়া হয়েছিল।

গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, শহরের সাতমাথা থেকে থানা মোড় পর্যন্ত বাতাসে পোড়া গন্ধ। আগুনে পুড়ে সদর থানা ভবন পুরোটায় ধ্বংসস্তূপ। সদর থানা চত্বরেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (সার্কেল) কার্যালয়। এ কার্যালয়ের আসবাব থেকে শুরু করে টিনের ছাউনি, জানালা সবকিছুই লুট হয়েছে। ওসির, এসআই ও ডিউটি অফিসারের কক্ষ সবখানেই ভাঙচুর করার চিহ্ন। থানা চত্বরে অসংখ্য মোটরসাইকেলের পোড়া কঙ্কাল।

বগুড়া সদর থানায় আগুন নেভাতে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা

প্রত্যক্ষদর্শী, বিক্ষোভকারী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুরের পর বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিল নিয়ে শহরের সাতমাথা অভিমুখে রওনা দেন। পুলিশ পথে বিক্ষোভকারীদের মিছিলে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ এ সময় কাঁদানে গ্যাসের সেল, রাবার বুলেট ও গুলি ছোঁড়ে। বিকেলে লাখো জনতা শহরের রাস্তায় নেমে আসে। তখন একদল লোক সদর থানায় দফায় দফায় হামলার চেষ্টা করে। পুলিশ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বিক্ষুব্ধ লোকজন সদর ফাঁড়ি এবং পুলিশ প্লাজায় হামলা, ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আন্দোলকারীরা সদর থানায় ককটেল হামলা করে। এ সময় পুলিশ গুলি চালায়। এতে অন্তত ৬৫ জন বুলেটবিদ্ধ হন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা সদর থানার প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।

ওই সময় ওসি, পুলিশ পরিদর্শক, এসআই, ডিউটি অফিসারসহ পুলিশ সদস্যদের সবগুলো কক্ষের পাশাপাশি পাশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে পুরো থানার নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার সব কক্ষ পুড়ে যায়। হামলাকারীরা থানাসংলগ্ন আবাসিক কোয়ার্টারেও অগ্নিসংযোগ করে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সেনাবাহিনী সদস্যরা সেখানে পৌঁছে পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে পুলিশ লাইনসে নিয়ে যান।

হামলা ও সংঘর্ষে পুলিশের বেশ কিছু অস্ত্র লুট হয়। থানার সব কক্ষের আসবাব, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, টিভি, এসি, মোটর, জেনারেটর, চেয়ার, টেবিল, পাখা ও বিভিন্ন অভিযানে জব্দ করা একাধিক মোটরসাইকেল লুট হয়। থানার আবাসিক কোয়ার্টার থেকে পুলিশ পরিবারের সদস্যদেরও নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, বগুড়া সদর থানার নিয়ন্ত্রণ পুলিশের হাতে নেই। সেখানে বর্তমানে কোনো পুলিশ সদস্য নেই। অস্ত্র লুটতরাজ হয়েছে কিনা, পুলিশের কাছে এখন সেই হিসাব নেই।