কেন্দ্রের বাইরে ‘সাংবাদিকের কার্ড’ ঝুলিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতার পাহারা

কোনো ভোটার কেন্দ্রে এলেই নৌকা প্রতীকের কাগজ ধরিয়ে দিয়ে ভোট চাইছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মোস্তাক আহমেদ (ডানে)। আজ বুধবার সকালে নাপিতের হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে
ছবি: সোয়েল রানা

সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্র ফাঁকা। কেন্দ্রে অলস বসে আছেন ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ অন্য কর্মকর্তারা। পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরাও অলস সময় কাটাচ্ছেন। কেন্দ্রের ভেতরে যখন এমন চিত্র, বাইরে তখন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের জটলা। অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মী নিয়ে কেন্দ্রের মূল ফটকের সামনে পাহারা বসিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা। তাঁর গলায় ঝুলছে নির্বাচন কমিশন থেকে প্রদান করা সাংবাদিকদের কার্ড। কোনো ভোটার কেন্দ্রে এলেই নৌকা প্রতীকের কাগজ ধরিয়ে দিয়ে ভোট চাইছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরা তাঁকে এ কাজে সহায়তা করছেন।

আজ বুধবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার নাপিতের হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে এ চিত্র দেখা যায়। গলায় সাংবাদিকের কার্ড ঝুলিয়ে রাখা ওই ব্যক্তি আদতে সাংবাদিক নন। তাঁর নাম মোস্তাক আহমেদ ওরফে রঞ্জু। তিনি গাইবান্ধা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও গাইবান্ধা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। এ ছাড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পদেও ছিলেন।

এর মধ্যে ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম ছালুয়া গ্রামের ভোটার শফিকুল ইসলাম ভোট দিতে এলেন। কেন্দ্রে ঢোকার আগে শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললেন কেন্দ্রের বাইরে থাকা নেতা-কর্মীরা।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ‘অ্যালাই (এখনই) নৌকায় ভোট চায় তাঁরা।’

কেন্দ্রের ফটকের সামনে থেকে মাঝেমধ্যে কেন্দ্রের ভেতরেও প্রবেশ করতে দেখা গেল মোস্তাক আহমেদকে। জানতে চাইলে সাংবাদিকের কার্ড দেখিয়ে মোস্তাক বলেন, ‘আজ বৈধভাবেই কেন্দ্রে এসেছি।’ তবে তিনি কোনো গণমাধ্যমকর্মী বা সাংবাদিক না বলে স্বীকার করলেন। সাংবাদিকের জন্য বরাদ্দ কার্ড কীভাবে পেলেন জানতে চাইলে মোস্তাক বলেন, ‘আমি কীভাবে কার্ড পেয়েছি সেটা নির্বাচন কমিশনকে জিজ্ঞেস করুন।’

কেন্দ্রের বাইরে অবস্থানের বিষয়ে মোস্তাক বলেন, সকালে ভোটারের উপস্থিতি কিছুটা কম। এ জন্য নৌকার প্রার্থী মাহমুদ হাসানের পক্ষে ভোটারদের বাড়ি থেকে কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য তাঁরা কাজ করছেন। ভোটারদের বাড়ি থেকে কেন্দ্রে আনতে ভ্যান ও ইজিবাইক ভাড়া করেছেন তাঁরা। দুপুরের পর নৌকার ভোটার বাড়বে বলে ধারণা করছেন তিনি।

এ বিষয়ে নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা ও ঢাকা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকের জন্য বরাদ্দ করা বিশেষ ওই কার্ড সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া কারও কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কীভাবে ওই কার্ড পেয়েছেন, তিনি সেটা জানেন না। এ বিষয়ে তিনি খোঁজ নেবেন।    

স্থানীয় কালিরবাজারের বেশ কয়েকজন ভোটার এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের ভোটের দিনেও সদলবলে কেন্দ্রে তৎপর ছিলেন মোস্তাক আহমেদসহ ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। পরে বিভিন্ন কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ভোট গ্রহণের মাঝপথে নির্বাচন বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। গত বছরের ২৩ জুলাই তিনি মারা যান। এরপর গত ১২ অক্টোবর এই আসনে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণের মাঝপথে নির্বাচন বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোট চলাকালে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে ৫১টি ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম দেখতে পেয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তদন্ত করে বিভিন্ন পর্যায়ের ১৩৪ জন নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।

উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পাঁচ প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের মাহমুদ হাসান (রিপন), জাতীয় পার্টির (জাপা) গোলাম শহীদ, বিকল্পধারার জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র নাহিদুজ্জামান ও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।