ছেলেকে কচুরিপানার স্তূপে তুলে দিয়ে ডুবে মারা যান বাবা

চোখের সামনে বাবাকে ডুবে যেতে দেখেছে দীপায়ন। মাগুরার শালিখা উপজেলার বড় থৈপাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার
ছবি: প্রথম আলো

তালের ডোঙায় আট বছরের ছেলেকে নিয়ে বিলে জাল পাততে গিয়েছিলেন কমলেশ বিশ্বাস। বিলের মাঝে পৌঁছানোর পর শুরু হয় ঝড়সহ বৃষ্টি ও বজ্রপাত। এতে ডুবে যায় ছোট ডোঙা। আবহাওয়া এতটাই বৈরী ছিল আশপাশে উদ্ধার করার মতো কেউ ছিল না। অনেক কষ্টে ছেলেকে ভাসমান একটি কচুরিপানার স্তূপের ওপর তুলে দেন কমলেশ। বৃষ্টি শেষে শিশুটিকে উদ্ধার করা গেলেও কমলেশ ডুবে মারা গেছেন।

গতকাল বুধবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে মাগুরার শালিখা উপজেলার ধনেশ্বরগাতী ইউনিয়নের পিটভাড়া বিলে। মৃত কমলেশ বিশ্বাস (৩৫) বড় থৈপাড়া গ্রামের কুমারেশ বিশ্বাসের ছেলে। একই দিনে ওই বিলে মাছ ধরার জাল পাততে গিয়ে ডোঙা ডুবে মারা গেছেন কনক বিশ্বাস (৪০) নামে আরও এক ব্যক্তি। তিনি বড় থৈপাড়া গ্রামের কালিপদ বিশ্বাসের ছেলে। বুধবার রাতেই বিল থেকে কনক বিশ্বাসের মরদেহ উদ্ধার করে এলাকাবাসী। আর বৃহস্পতিবার সকালে উদ্ধার করা হয় কমলেশ বিশ্বাসের লাশ।

মাগুরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক আলী সাজ্জাদ বৃহস্পতিবার সকালে জানান, বুধবার বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে তাঁরা খবর পান থৈপাড়া গ্রামের ওই বিলের মধ্যে মাছ ধরতে গিয়ে দুজন নিখোঁজ হয়েছেন। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাতে এ বিষয়টি নিশ্চিত হন। কিন্তু কোনো ডুবুরি না থাকায় রাতে তারা অভিযান চালাতে পারেননি। সকালে খুলনা থেকে ডুবুরি আসার আগেই স্থানীয় লোকজন দুজনের লাশ উদ্ধার করে।

নিহত কমলেশ বিশ্বাসের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার বেলা তিনটার দিকে আট বছরের ছেলে দীপায়ন বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে তালের ডোঙায় করে পিটভাড়ার বিলে জাল পাততে যান কমলেশ। তখন আকাশে কোনো মেঘ ছিল না। বিকেল পৌনে চারটার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে ছিল ঝোড়ো হাওয়া ও বজ্রপাত। এমন পরিস্থিতিতে, বিলের মাঝে বিপাকে পড়েন বাবা-ছেলে। একপর্যায়ে ডোঙাটি ডুবে যায়। তখন স্থানীয় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেকে ঘাড়ে করে সাঁতরে ভাসমান একটি কচুরিপানা স্তূপের ওপর তুলে দেন কমলেশ। কিন্তু তিনি নিজে আর সাঁতরে টিকে থাকতে পারেননি।

কমলেশের ভাই নরোত্তম বিশ্বাস বলেন, ওই সময় বিলে অনেকেই ছিল। কিন্তু আবহাওয়া এতটাই বৈরী ছিল যে একটু দূরেও কাউকে দেখা যাচ্ছিল না। আবহাওয়া একটু অনুকূলে এলে লোকজন জানতে পারে দুইটা ডোঙা ডুবে গেছে। প্রথমে তাঁর ভাইয়ের ছেলের কান্না শুনে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। তারপর এলাকার লোকজন নৌকা নিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। খোঁজাখুঁজি করার একপর্যায়ে রাত ১২টার দিকে কনকের লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। সকালবেলা উদ্ধার হয় কমলেশের মরদেহ।