বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সরকারের বিভিন্ন লোকজন বলছেন, খেলা হবে। এটা খেলা নয়, রাজনীতি। এই রাজনীতির মাধ্যমেই তাঁরা দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে মেরামত করতে চান।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় কুমিল্লা নগরের খন্দকার হক ম্যানশনের পঞ্চম তলায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আগামীকাল শনিবার কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গণসমাবেশে জনস্রোত ঠেকাতে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন ধরনের ফন্দি করছে বলে অভিযোগ করেন খন্দকার মোশাররফ। তিনি বলেন, কুমিল্লার জনগণ ফুঁসে উঠেছে। দ্রব্যমূল্যের দাম হু হু করে বেড়েছে। দেশ এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। সরকারকে জনগণ কুমিল্লার সমাবেশ থেকে লাল কার্ড দেখাবে। এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে।
মোশাররফ হোসেন বলেন, কুমিল্লা এখন উত্সবের নগরী। মুক্তিকামী জনতা সমাবেশের এক দিন আগ থেকে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছেছে। এটা দেখে অবৈধ সরকার ও তাদের মদদপুষ্ট পুলিশ বাহিনী কুমিল্লা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে নারকীয় তাণ্ডব শুরু করেছে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভাঙচুর ও হামলা করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জসিম উদ্দিন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উদবাতুল বারী, সদস্যসচিব ইউসুফ মোল্লা, মহানগর বিএনপির সদস্য কাউছার জামান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হেলমেট পরে সশস্ত্র অবস্থায় মোটরসাইকেল মহড়া ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গায়েবি মামলাসহ নানা ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।
সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা ও আশপাশের জেলার বিভিন্ন এলাকায় নেতা–কর্মীদের হয়রানি, মারধর, গ্রেপ্তারের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে গণসমাবেশের প্রচারপত্র বিতরণের সময় ছাত্রদল নেতা রফিকুল ইসলাম ওরফে নয়ন মিয়াকে পুলিশ পেটের সঙ্গে শর্টগান ঠেকিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। ১৭ সেপ্টেম্বর মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিপুলাসাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলুর ওপর হামলা করা হয়। ২১ নভেম্বর রাতে লাকসাম পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনির আহমেদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। ১৯ নভেম্বর মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা ইউনিয়নের বাতাবাড়িয়া গ্রামে ছাত্রদল নেতা লিটনের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। লাকসাম পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা আমান উল্লাহকে তুলে নিয়ে লাকসাম রেলক্লাবে মারধর করে টাকা পয়সা ও মুঠোফোন নিয়ে যায়। চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সলিম উল্লাহর বাড়িতে পুলিশি তল্লাশি করা হয়। ২৩ নভেম্বর থেকে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তিতে ঘরে ঘরে তল্লাশি ও গণগ্রেপ্তার করা হয়। হাজীগঞ্জ উপজেলায় ১০ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশে এখন বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। মানুষ নায্য বিচার পাচ্ছেন না। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। এটা মানুষ আর সহ্য করতে পারছে না। এই কারণে বিএনপির নেতা–কর্মীদের দাবির সঙ্গে সাধারণ মানুষ এক হয়ে গণসমাবেশে আসছে। আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। আওয়ামী লীগ নির্বাচনের সব কাঠামো ভেঙে দিয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনগুলোতেও বিনাভোটে জয়ী হচ্ছে। অন্যরা নির্বাচন করতে পারছে না। ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
সমাবেশকে উপলক্ষ করে গোটা কুমিল্লা নগরী উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আপনার দেখেছেন, এত বাধাবিপত্তির পরও আগের সাতটি সমাবেশ ব্যাপক শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কথা দিলাম, কুমিল্লার সমাবেশও শান্তিপূর্ণ হবে।’