কিশোরগঞ্জে এযাবৎকালের সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যেই বিদ্যালয়ে যেতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। আজ মঙ্গলবার সকালে বাজিতপুর উপজেলার সরারচর এলাকার ভান্ডা মজলিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
কিশোরগঞ্জে এযাবৎকালের সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যেই বিদ্যালয়ে যেতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। আজ মঙ্গলবার সকালে বাজিতপুর উপজেলার সরারচর এলাকার ভান্ডা মজলিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে

কিশোরগঞ্জে তাপমাত্রা এযাবৎকালের সর্বনিম্ন হলেও বন্ধ রাখা হয়নি বিদ্যালয়

কিশোরগঞ্জে আজ মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হলেও কোনো বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়নি। এটি এই জেলায় এযাবৎকালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। সন্তানদের তীব্র শীতের মধ্যে ক্লাসে পাঠাতে হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক অভিভাবক।

নিকলীর প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, কিশোরগঞ্জের একমাত্র আবহাওয়া কার্যালয় নিকলীতে আজ সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের আরও কয়েকটি অঞ্চলে এর চেয়ে কম তাপমাত্রা থাকলেও কিশোরগঞ্জে এযাবৎকালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড এটি। তাপমাত্রা রেকর্ডের পরপরই বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে ও সরেজমিন দেখা গেছে, নিকলীসহ জেলার কোনো বিদ্যালয়েই পাঠদান বন্ধ ছিল না আজ।

জেলার শিক্ষা কর্মকর্তা ও কয়েকটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা বলেন, ‘তাপমাত্রা’ বিষয়টি নিয়ে তাঁদের অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি আছে। আবহাওয়া কার্যালয় সকাল ৯টার দিকে তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বললেও মুঠোফোনে গুগলের মাধ্যমে তাঁরা দেখেন জেলার তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া সকাল ৯টার পর যখন তাপমাত্রা রেকর্ডের হিসাব পাওয়া যায়, ততক্ষণে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে চলে আসে। এমন সময়ে নোটিশ দিয়ে বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা কঠিন। তবে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আজ থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে পাঠদান শুরু হয়েছে। আগে সকাল ৯টা থেকে শুরু হতো।

আজ সকাল পৌনে ১০টার দিকে জেলার বাজিতপুরের সরারচর শিবনাথ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়, সৌদামিনী সুরবালা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, হাজী আব্দুল বারী উচ্চবিদ্যালয়, ভান্ডা মজলিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তীব্র শীত ও কুয়াশার মধ্যেই শিশুরা বিদ্যালয়ে আসছে। অনেক শিশু কুয়াশার মধ্যে মাঠে দৌড়াদৌড়ি করছিল। যদিও সে সময় কুয়াশার কারণে অনেক যানবাহনকে রাস্তায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

ভান্ডা মজলিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফারহানা আক্তার বলেন, চলমান শৈত্যপ্রবাহের কারণে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তাপমাত্রার হিসাবের এই জাঁতাকলে শিক্ষার্থীদের না ফেলে কনকনে এ শীতের সময় কয়েক দিনের জন্য বিদ্যালয় বন্ধ রাখা উচিত বলে মনে করেন তিনি। তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলে আবার নিয়মিত পাঠদান শুরুর পরামর্শ তাঁর।

কিশোরগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ২৭০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে মোট ১ হাজার ৩২৯টি।

নিকলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাপিয়া আক্তার বলেন, আবহাওয়া কর্মকর্তা তাঁকে তাপমাত্রার বিষয়টি জানানোর পর তিনি মুঠোফোনে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির ওপরে দেখতে পান। সে জন্য বিদ্যালয় ছুটির নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় আজ থেকে সকাল ১০টায় পাঠদান শুরু হয়েছে।

একই কথা বলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিব আলম। তিনি বলেন, সকালের পর তাঁরাও মুঠোফোনে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির ওপরে দেখতে পান। সে জন্য বিদ্যালয় বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয়নি। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সামছুন্নাহার মাকসুদারও একই ভাষ্য। তিনি বলেন, দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা যেহেতু বেড়ে যায়, যে কারণে স্কুল বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। তবে তাপমাত্রা যদি বেলা বাড়ার পরেও ১০ ডিগ্রির কম থাকে, তাহলে তিনি বিষয়টি নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপপরিচালকের সঙ্গে কথা বলবেন।

এ বিষয়ে নিকলীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, কিশোরগঞ্জের মধ্যে নিকলীতেই যেহেতু থার্মোমিটারের মাধ্যমে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়; তাই এটা শুধু নিকলীর রেকর্ড না, বরং পুরো জেলার রেকর্ডই এটি। আর কেউ যদি মুঠোফোনে গুগলের সার্চ করে তাপমাত্রা রেকর্ড দেখেন, তাহলে সেটা আবহাওয়া কার্যালয়ে গ্রহণযোগ্য হবে না।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, তাপমাত্রা এ অবস্থায় থাকলে স্কুল বন্ধ রাখা উচিত; না হলে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।