বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

ময়মনসিংহে নিহত বিপ্লব হাসান ও নূরে আলমের লাশ তুলতে দেননি স্বজনেরা

নিহত বিপ্লব হাসান (বাঁয়ে) ও নূরে আলম সিদ্দিকী
ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চলাকালে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে গুলিতে নিহত বিপ্লব হাসান ও নূরে আলম সিদ্দিকীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তুলতে দেওয়া হয়নি। আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে লাশ তুলতে গেলেও স্বজনেরা সম্মত হননি। আপত্তির মুখে লাশ উত্তোলন না করেই ফিরে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২০ জুলাই জেলার গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের কলতাপাড়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন তরুণ নিহত হন। তাঁরা হলেন বিপ্লব হাসান (২০), নূরে আলম সিদ্দিকী ওরফে রাকিব (২০) ও জোবায়ের আহমেদ (২১)।

এ ঘটনায় গৌরীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শফিকুল আলম বাদী হয়ে ২২ জুলাই থানায় একটি মামলা করেন। অজ্ঞাত পরিচয়ধারী চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয় ওই মামলায়। এজাহারে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়—এমন একটি মহল অবৈধভাবে সরকার পতনের উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র করে। অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র অনুযায়ী বন্দুকধারী চার-পাঁচজন দুষ্কৃতকারী গুলি করে তিন তরুণকে হত্যা করে।

নিহত বিপ্লব কলতাপাড়া বাজার এলাকায় চূড়ালি গ্রামে বাসিন্দা ও স্থানীয় তেলের মিলের শ্রমিক, নূরে আলম সিদ্দিকী রামগোপালপুর ইউনিয়নের দামগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও মাদ্রাসাশিক্ষক এবং জোবায়ের মইলাকান্দা ইউনিয়নের পূর্ব কাউরাট গ্রামের বাসিন্দা ও শম্ভুগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী ছিলেন। ঘটনার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই তিনজনের লাশ দাফন করেন স্বজনেরা।

পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলার পর ডৌহাখলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রহিম আকন্দ ও একই ইউনিয়নের কৃষক দলের নেতা আবুল কাশেম বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন ময়মনসিংহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। মামলা দুটিতে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের আসামি করা হয়। আদালত থানায় হওয়া মামলার সঙ্গে দুটি মামলা যুক্ত করে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয় বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নিহত হওয়ার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই তিনজনের লাশ দাফন করা হয়েছিল। মামলার তদন্তের স্বার্থে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাসান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও কে এম রাসফসান রাব্বির নেতৃত্বে পুলিশ ও ডিবি পুলিশের সদস্যরা আজ বেলা ১১টার দিকে নিহত ব্যক্তিদের বাড়িতে যান।

নিহত বিপ্লব হাসানের বাবা বাবুল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলে হত্যায় আমি কোনো মামলা করিনি। মামলা করব কি না, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিইনি। সারা দেশে অনেক হত্যা হয়েছে। সবার লাশ যদি ময়নাতদন্তের জন্য তোলা হয়, তাহলে ছেলের লাশও তুলতে দেব। শুধু আমার ছেলের লাশ একা তুলতে দেব না। প্রশাসনের লোকজন এসে তুলতে চাইলেও আমি দিইনি।’ একই কথা বলেন নূরে আলম সিদ্দিকীর বাবা আবদুল হালিম। তিনি বলেন, ‘আবু সাঈদসহ সারা দেশে বহু ছাত্র-জনতা হত্যা হয়েছে। সবার লাশ তুললে আমার ছেলে লাশও তুলতে দেব।’

তদন্তের স্বার্থে নিহত ব্যক্তিদের লাশের ময়নাতদন্ত করতে আদালত লাশ উত্তোলনের জন্য গত মাসে আদেশ দেন বলে জানান জেলা ডিবির ওসি শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, লাশ উত্তোলনের আদেশ পেয়ে উত্তোলন করতে গেলেও পরিবারের আপত্তির কারণে তোলা যায়নি। পরিবারের দাবি, সারা দেশে অন্য লাশ তোলা হলে তারপর তারা সম্মতি দেবে। ওই অবস্থায় লাশ না তুলেই ফেরত আসা হয়।