রহমতপুর দারুস সুন্নাহ এবতেদায়ি কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় সরকারি বরাদ্দ আটকে রাখা হয়েছে।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে রহমতপুর (রামভদ্রপুর) দারুস সুন্নাহ এবতেদায়ি কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ভুয়া এতিম বানিয়ে সরকারি বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানে চলতি বছরের সরকারি বরাদ্দ আটকে রাখা হয়েছে।
ওই মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বেশকিছু শিক্ষার্থীর বাবা জীবিত আছেন। কিন্তু তাঁদের ভুয়া মৃত্যুসনদ দিয়ে এতিম বানানো হয়েছে।ইমাম হাসিম, উপপরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর, জয়পুরহাট
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর ও পাঁচবিবি ইউএনওর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এতিমখানার এতিম শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা করে সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বরাদ্দের টাকার মধ্যে খাদ্য বাবদ ১ হাজার ৬০০ টাকা ও পোশাক বাবদ ২০০ টাকা, ওষুধ ও অন্যান্য বাবদ ২০০ টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের জন্য জেলার বেসরকারি এতিমখানার কর্তৃপক্ষ এতিমদের নামের তালিকা নিজ-নিজ উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করে। এতিম শিশুদের এ তালিকা যাচাই-বাছাই করে নিজ-নিজ উপজেলা ও শহর সমাজসেবা অধিদপ্তরের কার্যালয় থেকে তালিকা অনুমোদন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়। গত ২৭ ফেরুয়ারি সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে জয়পুরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলার ২৬টি বেসরকারি এতিমখানার ৪১৪ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৪৯ লাখ ৬৮ হাজার বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে রহমতপুর (রামভদ্রপুর) দুারুস সান্নাহ এবতেদায়ি ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা এবং এতিমখানার ৪৩ জন এতিম শিক্ষার্থীর জন্য ৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
জম্ম ও মৃত্যুসনদ অনলাইনে যাচাই করা যায়। এখানে সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের গাফিলতি রয়েছে।নাজমুল হোসেন, চেয়ারম্যান, বাগজানা ইউপি
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি এতিমখানার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এক শিক্ষক বলেছিলেন, যদি কেউ তাদের বাবার কথা জিজ্ঞাসা করে, তখন যেন তারা বলে বাবা জীবিত নেই। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি বাড়িতে জানায়। তখন কয়েকজন অভিভাবকের সন্দেহ হয়। তাঁরা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে বিষয়টি জনান। ইউএনও বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। এরপর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহিনুর আফরোজ ওই মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থীদের বাবার মৃত্যুসনদ যাচাইয়ের জন্য বাগজানা ইউনিয়ন পরিষদ পাঠান। সেখানে ৪৫ জনের মধ্যে ৩৩ জনের বাবাকে জীবিত পাওয়া যায়। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির মুহতামিম আবদুল খালেক বলেন, ‘সমাজসেবা কার্যালয়ে এতিমদের নামের তালিকা দিয়েছিলাম। তবে মৃত্যুসনদগুলো কীভাবে আসলো, সেটি জানি না।’
শাহিনুর আফরোজ প্রথম আলোকে বলেন, দুই ধরনের এতিম রয়েছে। ১৮ বছর পর্যন্ত যেসব শিশুদের বাবা জীবিত নেই তাঁরাই এতিম। আবার মা-বাবা দুজনই জীবিত আছেন কিন্তু সন্তান পরিত্যক্ত। এই শিশুও এতিম। রহমতপুর (রামভদ্রপুর) দারুস সান্নাহ এবতেদায়ি কওমি মাদ্রাসা এবং এতিমখানার ৪৫ জন এতিম শিক্ষার্থীর নামের তালিকা ও তাদের বাবার মৃত্যুসনদ জমা দিয়েছিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ৪৩ জনের জনের বরাদ্দ এসেছে। দুজন বাদ পড়েছে। তবে সরেজমিন তদন্ত ও অনলাইনে মৃত্যুসনদ যাচাই করে মাত্র ১২ জন শিক্ষার্থীর বাবার মৃত্যু সনদ পাওয়া গেছে। ৩৩ জন শিক্ষার্থীর বাবা জীবিত রয়েছেন। এই ৩৩ জন শিক্ষার্থীর বাবার ভুয়া মৃত্যুসনদ তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাগজানা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাজমুল হোসেন বলেন, জম্ম ও মৃত্যুসনদ অনলাইনে যাচাই করা যায়। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তারা এতিমদের তালিকা অনুমোদনের আগে মৃত্যু সনদগুলো অনলাইনে যাচাই করতে পারতেন। যদি তখন যাচাই করা হতো, তখনই সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসত। এখানে সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের গাফিলতি রয়েছে।
জানতে চাইলে জয়পুরহাটের সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ইমাম হাসিম বলেন, ওই মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বেশকিছু শিক্ষার্থীর বাবা জীবিত আছেন। কিন্তু তাঁদের ভুয়া মৃত্যুসনদ দিয়ে এতিম বানানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত চলছে। এ কারণে চলতি বছরের ওই মাদ্রাসার এতিমদের নামে আসা বরাদ্দ ছাড় করা হয়নি।