নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলামের (শিমুল) বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতার দেওয়া আগুনের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে শহরের কান্দিভিটুয়া মহল্লার জান্নাতি প্যালেস নামের ওই বাড়ির একাধিক কক্ষ, বারান্দা ও ছাদে এসব মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়।
আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে প্রথমে আকিব হোসেন (১৭) নামের এক কলেজ ছাত্রের মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। সে নাটোর সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার বাবা দেলোয়ার হোসেন একই কলেজের অধ্যক্ষ এবং জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি। সম্প্রতি তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
নিহত অন্য তিনজন হলেন, তালতলা এলাকার এইচএসসি পরীক্ষার্থী সিয়াম হোসেন (১৮), মল্লিকহাটি মহল্লার ইয়াছিন আলী (১৮) এবং উত্তর বড়গাছার শরিফুল ইসলাম মহন (২৭)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর শোনার পর গতকাল সোমবার বিকেলে সংসদ সদস্য শফিকুলের ওই বাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। বাড়িটির পাশে তাঁর ছোট ভাইয়ের একটি পাঁচতলা বাড়ি ও সংসদ সদস্যের পুরোনো বাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তিনটি বাড়িতেই লুটপাট চলতে থাকে। সংসদ সদস্যের বাড়িতে আটকে পড়া এক তরুণকে জনতা উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার এক দিন পর আজ সকালে বাড়িটির ভেতর থেকে আকিবসহ বাকিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
আকিবের মামা তুহিন ইসলাম জানান, গতকাল বিকেলে আকিব বাড়ি থেকে শহরে বের হয়। এর পর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। আজ সকালে সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলামের পুড়ে যাওয়া বাড়ি দেখতে গিয়ে তিনতলার বেলকনিতে মৃতদেহটি পড়ে থাকতে দেখেন এক নারী। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন সেখানে গিয়ে সেটি আকিবের বলে শনাক্ত করেন। এ প্রতিবেদন লেখার সময় সকাল সোয়া আটটা পর্যন্ত মৃতদেহটি সেখানে পড়ে ছিল।
একপর্যায়ে দ্বিতীয়তলার একটি কক্ষের মেঝেতে আরও দুজনের কঙ্কাল পড়ে থাকতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শী দেবাশীষ প্রামাণিক জানান, ওই দুই মৃতদেহ দেখে চেনার কোনো উপায় নেই।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান। তিনি জানান, তাঁরা খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আপাদত তাঁরা থানার বাইরে যেতে পারছেন না।
জেলার বিভিন্ন স্থানে গতকাল হামলা–সহিংসতায় ৩৭ জন আহত হয়েছেন। এদের অনেকেই নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে জরুরী বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, আহতদের মধ্যে শাওন (২৫) নামের এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁর বাড়ি শহরের তেবাড়িয়া এলাকায়। অন্যদিকে আগুনে পুড়ে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের মধ্যে রবিন (২৩) নামের এক তরুণ রয়েছেন। এ ছাড়া তেবাড়িয়া রোডের বাসিন্দা আশফাকুল ইসলাম (৫০) মারপিটে গুরুতর আহত হয়ে রাজশাহীতে চিকিৎসাধীন আছেন।