নেত্রকোনায় গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও বন্যার কারণে বাজারে সব ধরনের সবজির সরবরাহ কমে গেছে। আজ শুক্রবার সকালে শহরের জয়েরবাজারে
নেত্রকোনায় গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও বন্যার কারণে বাজারে সব ধরনের সবজির সরবরাহ কমে গেছে। আজ শুক্রবার সকালে শহরের জয়েরবাজারে

নেত্রকোনায় বন্যার মধ্যে বাজারে সবজির চড়া দাম

গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও বন্যায় নেত্রকোনার বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে সবজির খেত নষ্ট হয়েছে। ফলে বাজারগুলোয় সরবরাহ কমে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। বাজার করতে গিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষেরা হিমশিম খাচ্ছেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, জেলার বাইরে থেকে সবজি আমদানি করতে হচ্ছে বলে পণ্যের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে উৎপাদনও কম।

আজ শুক্রবার সকালে শহরের জয়েরবাজার (ঘুষেরবাজার), মেছুয়াবাজার, আখড়াবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩৫ টাকা বেড়েছে। বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই বললেই চলে। বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতিও কম দেখা গেছে।

জয়েরবাজারে সবজি কিনতে এসেছেন শহরের মোক্তারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. আনিসুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও বন্যার কারণে বাজারে এখন সবজি নেই বললেই চলে। যা–ও পাওয়া যায়, দাম খুবই বেশি। আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের হাতের নাগালের বাইরে। বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম চাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে অল্প অল্প করে কিছু সবজি কিনেছি। ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনেছি ৯৫ টাকা দিয়ে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার পর্যবেক্ষণ দরকার।’

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়স ৬০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটো ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, গাজর ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, বেগুন ৬৫ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, ঝিঙে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৬৫ থেকে ৮০ টাকা, পটল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, আলু প্রকারভেদে ৬০ থেকে ৭৫ টাকা, কচুমুখী ৮০ টাকা ও কাঁকরোল ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা সবজির দাম বেশি চাওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তুষ্টি দেখা গেছে। সবজি কিনতে আসা নাগড়া এলাকার বাসিন্দা মনোরঞ্জন সরকার বলেন, ‘শাকসবজির পাশাপাশি হঠাৎ করে মরিচের দামও অনেক বেড়ে গেছে। ঈদের পরদিনও ১৮০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ কিনেছিলাম। আজ ৩৮০ টাকা কেজি। পেঁয়াজের দামও কেজিপ্রতি ১০ টাকা বাড়ছে। তাই সবকিছু অল্প অল্প করে কিনলাম।’

সবজির সরবরাহ কম থাকায় ক্রেতার পাশাপাশি বিক্রেতার সংখ্যাও কম দেখা গেছে। আজ সকাল ৭টার দিকে জয়েরবাজারে প্রায় ১৭ জন ব্যবসায়ীকে সবজি নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। অথচ এই বাজারে প্রতিদিন ভোর থেকে প্রায় ৫০ জন ব্যবসায়ী নিয়মিত সবজি বিক্রি করেন। এর বাইরেও বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত সবজি বাজারে নিয়ে আসেন।

ছোটবাজার সুপার মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী হেলাল মিয়া বলেন, ‘নেত্রকোনায় সারা বছর প্রায় ৭৫ ভাগ সবজি আসে বাইরের জেলা থেকে। গত এক সপ্তাহে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে সবজির উৎপাদন কম। তাই আমাদের মোকামে সরবরাহ করা সবজির দাম কিছুটা বেশি।’

জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, এখন বৃষ্টি নেই, বন্যার পানিও নামতে শুরু করেছে। নতুন করে সবজি আবাদ করতে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে স্থানীয় কৃষকদের পরামর্শ ও প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর ব্যবসায়ীরা যদি সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ান, তাহলে তা অন্যায়। প্রশাসন মাঝেমধ্যে বাজার পর্যবেক্ষণ করে বলে জানান তিনি।