বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সীমান্তচৌকি এলাকায় আবার থেমে থেমে গোলাগুলি হচ্ছে। আজ বুধবার রাত আটটার দিকে গোলাগুলি শুরু হয় বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। এতে ওই সীমান্ত এলাকার লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতের গোলাগুলির ঘটনায় বিস্ফোরিত গোলার তিনটি অংশ বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পড়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ দুপুরে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন। সেখান থেকে ফিরে পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, তিনটি গোলার অংশ এসে পড়ার কথা স্থানীয় লোকজনের কাছে শুনেছেন, কিন্তু তাঁরা দেখেননি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
রাতে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঘুমধুম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড কোণারপাড়ার বিপরীতে তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও ১ নম্বর ওয়ার্ড তুমব্রু এলাকার পূর্ব পাশে ঢেঁকিবনিয়ায় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সীমান্তচৌকি রয়েছে। ওই দুই সীমান্তচৌকি এলাকায় আজ রাত আটটা থেকে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
শফিকুল ইসলাম জানান, গতকাল রাত ১০টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ওই দুই সীমান্তচৌকি এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছিল। আজ সকালে পশ্চিম ঘুমধুমে আবদুল গফুর, নুরুল ইসলামের বাড়ির কাছাকাছি দুইটি ও কোণারপাড়ার কালুমিয়ার বাড়ির কাছাকাছি একটি গর্ত দেখতে পাওয়া যায়। ওই তিনটি গর্তে তিনটি গোলার অংশ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিজিপি সীমান্তচৌকির গোলাগুলি ঘটনায় বিস্ফোরিত গোলার অংশ এসে পড়েছে। বিষয়টি পার্শ্ববর্তী বিজিবি ক্যাম্পে জানানো হয়। বিজিবি সদস্যদের কাছে গোলার অংশগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে।
তবে বিজিবির কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের সঙ্গে এ ব্যাপারে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কথা বলা যায়নি।
গত সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সকালেও মিয়ানমারের তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি এলাকায় গোলাগুলি হয়েছিল। সেই সময় তুমব্রু সীমান্তের কাছাকাছি শূন্যরেখায় মর্টারশেলের বিস্ফোরিত একটি অংশ এসে পড়েছিল। তখন আতঙ্কে সীমান্তের কাছাকাছি পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অর্ধদিবস ছুটি দেওয়া হয়েছিল।
সীমান্তের ওপারের লোকজনের বরাতে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তে তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি ছাড়া বিজিপির প্রায় সব কটি ক্যাম্প এবং সীমান্তচৌকি বিদ্রোহী আরাকান আর্মি (এএ) দখল করে নিয়েছে। এই দুই ক্যাম্প ও সীমান্তচৌকির বিজিপি সদস্যরা স্থল যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। বিজিপির এই দুই স্থাপনার একেবারে কাছাকাছি বাংলাদেশের জনবসতি থাকায় কৌশলগত কারণে সম্ভবত এখনো টিকে রয়েছে।
ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শনের সময় জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। এর জেরে এখনো পর্যন্ত তেমন সমস্যা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে বিজিবি, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা সতর্ক অবস্থা রয়েছে। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার সময় কোনো সমস্যা হলে পরীক্ষাকেন্দ্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারেও প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।