কাজী এম আনিছুল ইসলাম
কাজী এম আনিছুল ইসলাম

সহকর্মীর বিরুদ্ধে উদ্ধত আচরণের অভিযোগ তুলে সহকারী প্রক্টরের পদত্যাগ

সহকর্মীর বিরুদ্ধে উদ্ধত আচরণ ও নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর কাজী এম আনিছুল ইসলাম পদত্যাগ করেছেন। আজ বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরীর কাছে তিনি তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দেন।

কাজী এম আনিছুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান, ২০ ফেব্রুয়ারি ফার্মেসি বিভাগের প্রভাষক মো. কামরুল হাসান ও ১ এপ্রিল নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাসেনা বেগম সহকারী প্রক্টরের পদ ছাড়েন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন সহকারী প্রক্টরের মধ্যে চারজন পদত্যাগ করলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদত্যাগপত্র পেয়েছি। উপাচার্য মহোদয়কে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’ প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘এ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

পদত্যাগপত্রে কাজী আনিছুল ইসলাম উল্লেখ করেন, ভর্তি পরীক্ষার আসনবিন্যাস কমিটির সদস্যসচিব ও মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক সহকারী প্রক্টর আবু ওবায়দা রাহিদ সম্প্রতি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নির্মিতব্য সংরক্ষিত কক্ষে অবৈধভাবে ঢুকে আসনবিন্যাস করেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠান। অনুমতি ছাড়া ল্যাবে প্রবেশ ও আসন পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তিনি তাঁর (আনিছ) সঙ্গে উদ্ধত আচরণ করেন। ঈদের ছুটির পর ওই ঘটনা ঘিরে তিনি (রাহিদ) ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে শিক্ষার্থীদের সামনে তাঁকে অপমানসূচক নানা কথাবার্তা বলেন। তখন উপস্থিত শিক্ষকেরা তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও তিনি বারবার তাঁর (আনিছ) দিকে আসেন। পরে সমঝোতা বৈঠকেও প্রক্টর ও অধ্যাপকের সামনে তিনি মারতে উদ্যত হন।

পদত্যাগপত্রে আরও বলা হয়, সহকারী প্রক্টর পদের ক্ষমতা ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পর্কের জোর দেখিয়ে তিনি (রাহিদ) এ কাজ করেছেন। সুযোগ পেলে আক্রমণ করবেন বলে হুমকি দেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে প্রক্টরিয়াল বডিতে কাজ করতে তিনি তীব্র শঙ্কা ও বিব্রতবোধ করছেন। নিজের নিরাপত্তা, আত্মসম্মান রক্ষা ও বিভাগের কাজে মনোনিবেশ করতে তিনি পদত্যাগ করছেন।

অভিযোগের বিষয়ে সহকারী প্রক্টর আবু ওবায়দা রাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আসনবিন্যাসের জন্য সব বিভাগীয় প্রধানকে চিঠি দেওয়া হয়। সবাই চিঠির সাড়া দিয়েছেন। কিন্তু উনি দেননি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উনি জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হয়েও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সামনে আমাকে অপমান করেছেন। মারার জন্য তেড়ে আসেন। আমার বিরুদ্ধে করা ওনার সব বক্তব্য ভিত্তিহীন।’

সহকারী প্রক্টর ছাড়াও গত ২০ মার্চ প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, স্বেচ্ছাচারিতাসহ শিক্ষকদের সঙ্গে অন্যায্য আচরণের প্রতিবাদে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের হাউস টিউটর মো. জসিম উদ্দিন, নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের হাউস টিউটর জয় চন্দ্র রাজবংশী, কাজী নজরুল ইসলাম হলের হাউস টিউটর অর্ণব বিশ্বাস ও শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের হাউস টিউটর মোহাম্মদ মাহমুদুল হাছান খান পদত্যাগ করেন।

এরপর ২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও ক্রীড়া প্রতিনিধির পদ থেকে পদত্যাগ করেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল হক। এ ছাড়া ১৯ মার্চ ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শেখ মকছেদুর রহমান, ২০ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা হলের হাউস টিউটর কুলছুম আক্তার, ৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক তোফায়েল হোসেন মজুমদার পদত্যাগ করেন।