বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নিয়োগ দেওয়া কোষাধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে এবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকদের একটি অংশ। আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় এই কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এই সময় তাঁরা নতুন কোষাধ্যক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হলে প্রশাসনিক ও একাডেমিক সব ধরনের কার্যক্রমে সহযোগিতা না করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এর আগে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ক্যাম্পাসে নতুন কোষাধ্যক্ষকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সোমবার বেলা একটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় জড়ো হন শিক্ষকদের একটি অংশ। এ সময় তাঁরা নবনিযুক্ত কোষাধ্যক্ষ কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবু হেনা মোস্তফা কামাল খানের অপসারণ দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
ওই শিক্ষকদের দাবি, নতুন কোষাধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে সংহতি প্রকাশ করে স্বাক্ষর করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ১১৬ জন শিক্ষক। তাঁরা এ সময় ঘোষণা করেন, একজন অপেশাদার ব্যক্তিকে কোনোভাবেই তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে মানবেন না। তা ছাড়া আবু হেনা মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে আগের কর্মস্থলে দুর্নীতির অনেক অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের আপত্তি উপেক্ষা করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করলে তাঁরা সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন।
অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার কোনো আমলাদের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে মেনে নিতে পারছি না। আমাদের অধিকাংশ শিক্ষক এই দাবির সঙ্গে একমত। আমরা সরকারকে অনুরোধ করব, যেন এই সাবেক সেনা কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন শিক্ষাবিদকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
অবস্থান কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিরাজিস সাদিক, সৈয়দ আশিক-ই-ইলাহী, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল আলিম ও সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক মোস্তাকিম রহমান প্রমুখ।
শিক্ষকদের অভিযোগ, নতুন নিয়োগ পাওয়া কোষাধ্যক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করছেন। এমন তথ্যের সত্যতা আছে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের ব্যবস্থাপক আতিকুল হক ফরাজী বলেন, নিয়ম অনুযায়ী তিনি অফিসের গাড়িটি ব্যবহার করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ অক্টোবর রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের একাংশের বাধার মুখে যোগদান করতে এসেও ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন নতুন কোষাধ্যক্ষ আবু হেনা মোস্তফা কামাল খান। এর পর থেকে তিনি আর ক্যাম্পাসে আসেননি। পরদিন ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি জানান। এমনকি ওই দিন সন্ধ্যায় উপাচার্যকে পদত্যাগ করার জন্য ২৮ অক্টোবর দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের ওই অংশ। কিন্তু উপাচার্য ওই সময়সীমার মধ্যে পদত্যাগ না করায় ওই দিন তাঁর কার্যালয়ে তালা দেন তাঁরা। এ সময় তাঁরা কার্যালয়ের সামনে থেকে উপাচার্যের নামফলকও খুলে ফেলেন। শিক্ষার্থীদের ওই অংশকে নিয়ে রোববার সকাল থেকে পাঁচ ঘণ্টা দীর্ঘ বৈঠক করেন উপাচার্য শুচিতা শরমিন। কিন্তু সমঝোতা ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়ে যায়। পরে শিক্ষার্থীদের অপর এক অংশ উপাচার্যের কক্ষের তালা খুলতে গেলে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলরত শিক্ষার্থীরদের সঙ্গে তাঁদের বসচা ও পরে ধস্তাধস্তি হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওই অংশের দাবি, নতুন নিয়োগ পাওয়া কোষাধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন, যার তথ্য-প্রমাণ বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। এমন দুর্নীতিগ্রস্ত লোককে তাঁরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দেখতে চান না।
তবে আবু হেনা মোস্তফা কামাল খান তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে গত বুধবার দুপুরে বলেছিলেন, ‘যারা এসব অভিযোগ তুলেছে, সেগুলো ভিত্তিহীন।’
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি করা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারণ না করা ও বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে বিতর্কিত আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করেন উপাচার্য শুচিতা শরমিন। এ কারণে গত বুধবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি তোলেন। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এই দাবিতে ছাত্রদলসহ আরও কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের নেতারা একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
তবে শিক্ষার্থীদের অপর একটি অংশ এই দাবিকে অযৌক্তিক অভিহিত করে বলেন, একজন উপাচার্য যোগদান করার পর তিন মাসও যেতে পারেনি, তাঁর বিরুদ্ধে এভাবে এক দফার দাবি নিয়ে মাঠে নামাটা ছেলেখেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। এমন দাবি তোলার মধ্য দিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা, তা ভূলুণ্ঠিত করার অপপ্রয়াস ছাড়া কিছু না বলে মনে করেন তাঁরা।