ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচন

জাপার দুবারের সংসদ সদস্য জিয়াউল এবারও পাননি দলীয় মনোনয়ন, হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী

জিয়াউল হক মৃধা
ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে এবারও দলীয় মনোনয়ন পাননি জাতীয় পার্টির টানা দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আজ বুধবার দুপুরে তিনি তাঁর অনুসারীদের নিয়ে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

এবার এ আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ। জিয়াউল হক মৃধা জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির (রওশন) সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

জিয়াউল হক বলেন, ‘আমি রওশন এরশাদের হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছি। এখন লাঙ্গল দেওয়ার মালিক জি এম কাদের। কাজেই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। এ ছাড়া সব দলের মধ্যেই আমার সুহৃদ আছে। তাই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আমি মনে করি, স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেই ভালো হবে।’

উপনির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় সরকার দুটি আসনে (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও লক্ষ্মীপুর-৩) অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করবে তাদের স্বার্থেই। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, তবে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। তাদের ভবিষ্যতের স্বার্থেই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। এটা যদি সুষ্ঠু না হয়, তবে সরকারের ক্ষতি হবে। এটি সরকারের অস্তিত্বের প্রশ্ন। কারণ, এ দুটি আসনে উল্টাপাল্টা করলে তাদেরই ক্ষতি হবে।’

জাপার প্রার্থী আবদুল হামিদ ভাসানী বলেন, ‘আমি জাপার মনোনীত প্রার্থী। আমি দলীয় প্রতীক লাঙ্গল পেয়েছি। আমি লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন চালিয়ে যাব।’

দলের নেতা-কর্মীরা বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হয়ে জিয়াউল লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে নির্বাচন করেন। ওই সময় তিনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অন্যতম শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের প্রধান মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে (ধানের শীষ) প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন।

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এ আসনে দলীয় কোনো প্রার্থী না দিয়ে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পাননি জিয়াউল হক। তখন তাঁর মেয়ের জামাতা জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে দেওয়া হয় লাঙ্গল প্রতীক। তবে নির্বাচনের দুই দিন আগে রেজাউল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

নির্বাচনে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির প্রার্থী হয়ে ৮৩ হাজার ৯৯৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন। তিনি পেয়েছিলেন ৭৫ হাজার ৪১৯ ভোট। ওই নির্বাচনে জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। সিংহ প্রতীকে তিনি ৩৯ হাজার ভোট পেয়ে তৃতীয় হন।

গত বছরের ১১ ডিসেম্বর আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর গত ১ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের প্রত্যক্ষ সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী (কলার ছড়ি) হয়ে তিনি ৪৪ হাজার ৯১৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির আবদুল হামিদ। তিনি পেয়েছিলেন ৯ হাজার ৬৩৫ ভোট। গত উপনির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হন জিয়াউল হক। পরে তিনি সরে দাঁড়ান।

এ বিষয়ে জিয়াউল বলেন, দলীয় প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের নির্দেশে তিনি গত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। এখানে লাঙ্গল প্রতীকের কোনো প্রার্থী থাকলেও তাঁর ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে না।

নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া মারা যান। এতে আসনটি আবার শূন্য হয়। আগামী ৫ নভেম্বর এ আসনে আবার উপনির্বাচন হবে। উপনির্বাচনে পাঁচজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বাকি তিনজন হলেন আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির রাজ্জাক হোসেন এবং মো. ইব্রাহিম মিয়া (স্বতন্ত্র)। আগামীকাল বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে বলে জানিয়েছেন সরাইল উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন।