নানির কোলে অসুস্থ শিশু। শুক্রবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে
নানির কোলে অসুস্থ শিশু। শুক্রবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে

চুয়াডাঙ্গায় এক দিনে তাপমাত্রা কমেছে ৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, শীতে কাহিল মানুষ

চুয়াডাঙ্গায় পৌষের শেষ প্রান্তিকে জেঁকে বসেছে যেন মাঘের শীত। এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা ৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে, যা আজ শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড। কনকনে ঠান্ডা বাতাসে জনজীবন অনেকটাই থমকে গেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে কম বের হচ্ছেন। ঘন কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা কমে আসায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড় বেড়েছে হাসপাতালে।

আজ সকালে চুয়াডাঙ্গার পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার থেকে জানানো হয়, সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের এই জেলায় চলতি মৌসুমের এটি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। একই সময়ে বাতাসের আর্দ্রতা রেকর্ড করা হয়েছে ৯৪ শতাংশ। আজ সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ।
কর্কটক্রান্তির রেখায় অবস্থিত চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকাল বৃহস্পতিবার রেকর্ড করা হয়েছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক দিনের ব্যবধানে ৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যাওয়ায় জেলাজুড়ে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটির জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে আজ সকাল থেকে সূর্য কুয়াশা ভেদ করে ঠিকমতো তাপ ছড়াতে পারেনি। সেই সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে চরম শীত অনুভূত হচ্ছে।
এদিকে তীব্র শীতের কারণে ১০০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতাল, ৩টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের চেম্বারে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড় বাড়ছে। বিশেষ করে সদর হাসপাতালের শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডগুলোয় ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

শীতের সকালে কাজে বের হয়েছেন মানুষজন। আজ শুক্রবার সকালে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কেদারগঞ্জে

আজ সকালে জেলা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ১৪ শয্যার বিপরীতে ৪৬ জন শিশু চিকিৎসাধীন। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসক, নার্স ও শিক্ষানবিশ নার্সদের ব্যস্ততা লক্ষ করা গেল। আলমডাঙ্গা উপজেলার টাকপাড়া থেকে আসা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এক বছর বয়সী শিশু আবদুল্লাহকে নিজ হাতেই নেবুলাইজার দিচ্ছিলেন মা শেফালী খাতুন। শেফালী বলেন, ছেলেকে নিয়ে দুই দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। অবস্থার কোনো উন্নতি নেই।

দামুড়হুদা উপজেলা সদরের দশমীপাড়ার থেকে আসা ছয় মাস বয়সী শিশু লাবিব অনবরত কাঁদতে থাকায় নানি শাহিদা খাতুন ও মা নাসরিন বেগম দিশাহারা। একই উপজেলার কুনিয়া চাঁদপুর গ্রামের ফরিদা খাতুন বলেন, শ্বাসকষ্টের সমস্যায় এক বছর বয়সী নাতনি সাদিয়াকে নিয়ে তিন দিন ধরে হাসপাতালে আছেন। অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।

হাসপাতালের শিশু বিভাগের পরামর্শক (কনসালট্যান্ট) আসাদুর রহমান বলেন, শীতে শিশুরা খুবই অসুস্থ হচ্ছে। বিশেষ করে ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া ও রোটা ভাইরাস ডায়রিয়ায় ভুগছে বেশি। শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০টি শিশু ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৭০ থেকে ৮০ শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এমন আবহাওয়ায় শিশুদের ঠান্ডা লাগতে দেওয়া যাবে না। এ জন্য গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। ঠান্ডার পাশাপাশি আবার যাতে শিশু না ঘামে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

শিশু ওয়ার্ডে রোগী বেড়েছে। শুক্রবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে

আসাদুর রহমান আরও বলেন, ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের কেবল মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ছয় মাসের বেশি বয়সী শিশুদের বুকের দুধের পাশাপাশি পারিবারিক খাবার দিতে হবে। শিশুদের ডায়রিয়া দেখা দিলে পারিবারিক খাবারের পাশাপাশি খাবার স্যালাইন অবশ্যই খাওয়াতে হবে। সাধারণ পানিও খাওয়াতে হবে। মায়েদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং শিশুদেরও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

শিশু ওয়ার্ডের মতো মেডিসিন ওয়ার্ডেও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের চাপ বেড়েছে। আজ সকাল ৯টায় মহিলা (মেডিসিন) ওয়ার্ডে ১২ শয্যার বিপরীতে ৫৯ জন এবং পুরুষ (মেডিসিন) ওয়ার্ডে ১৩ শয্যার বিপরীতে ৭৩ জনকে ভর্তি থাকা অবস্থায় পাওয়া যায়। অর্থাৎ শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডে ৩৯ শয্যার বিপরীতে ১৭৮ জনকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মহিলা (মেডিসিন) ওয়ার্ডের শিক্ষানবিশ নার্স জান্নাতী খাতুন বলেন, মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা অ্যাজমা, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে অন্তবিভাগে চার শতাধিক রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া বহির্বিভাগে ৮০০ থেকে ১ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। বর্তমানে চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নিউমোনিয়া, রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত। সীমিত জনবল দিয়ে বিপুলসংখ্যক রোগীর সেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে।

আজ সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় বহির্বিভাগের চিকিৎসাসেবা বন্ধ। যে জন্য পুরো চাপ গিয়ে পড়েছে জরুরি বিভাগে। সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জোবাইদা জামান বলেন, শীতের কারণে শিশুরা নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস এবং বড়রা অ্যাজমা, হাঁপানিসহ শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন।