বান্দরবানে উৎপাদিত কাজুবাদাম এখন বান্দরবানেই প্রক্রিয়াজাত হয়ে সারা দেশের মানুষের কাছে যাচ্ছে। এর ফলে স্থানীয় উৎপাদক চাষিদের যেমন বাজার নিশ্চিত হচ্ছে, তেমনি ভোক্তারা কম দামে দেশি কাজু হাতের নাগালে পাচ্ছেন। একই সঙ্গে আমদানি–নির্ভরতা কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে বলে কৃষি বিভাগ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছেন।
জেলা শহরের পশ্চিম বালাঘাটা এলাকায় একটি মাঝারি আকারের কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। কিষাণঘর অ্যাগ্রো লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান কারখানাটি পাঁচ বছর আগে স্থাপন করে।
ওই কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। কাঁচা কাজুবাদাম বাছাই, সেদ্ধকরণ, ভেঙে খোসা আলাদা করাসহ সব প্রক্রিয়ায় যাঁরা অংশ নেন, তাঁদের অধিকাংশই নারী। তাঁরা কেউ দৈনিক পারিশ্রমিকে ও কেউ মাসিক বেতনে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন।
খোসা আলাদা করার প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত সাজুয়ারা বেগম বলেন, তাঁরা দৈনিক ২০০ টাকা পারিশ্রমিকে চার বছর ধরে কারখানায় কাজ করছেন। কাজুবাদামে একধরনের অ্যাসিড থাকায় খোসা ছাড়ানোর কাজ খুব কঠিন। অ্যাসিড চামড়ায় লাগলে ফোসকা পড়ে ঘা হয়ে যায়। তারপরও কারখানা স্থায়ী কাজের ঠিকানা।
কারখানায় কর্তনযন্ত্রে বাদাম কাটেন নুরুন নবী। তিনি বলেন, নারী-পুরুষ মিলে তাঁরা চারজন বাদাম কাটেন। প্রতি কেজি ৬ টাকা করে প্রতিদিন ৫০ কেজি বাদাম কাটলে ৩০০ টাকা হাতে আসে। তাঁদের হিসাবে কারখানায় দৈনিক ২০০ কেজি বাদাম প্রক্রিয়াজাত করা হয়। বড় দানা বাদামের জন্য কাটার মেশিন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বড় দানার বাদাম কম পাওয়া যায়। এ জন্য তাঁরা হাতে চালানো যন্ত্র দিয়ে বাদাম কাটেন।
কারখানার কর্মকর্তারা জানান, বাগান থেকে কাজুবাদাম সংগ্রহ করে কারখানায় আনার পর প্রক্রিয়াকরণে নয়টি ধাপ রয়েছে। শুরুতে রোদে শুকাতে হয়। তারপর ছোট ও বড় দানা আলাদা করে ব্রয়লারে সেদ্ধ করতে হয়। সেদ্ধ করা গরম বাদাম ঠান্ডা করে খোসা ছাড়ানো, কাটা, বাছাই ও প্যাকেজিংয়ের পর বাজারে নেওয়া হয়।
বাজারে প্রতি কেজি কিষাণঘর কাজুবাদাম পাইকারি ১ হাজার ২০০ টাকা ও খুচরা ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। তাঁরা সারা দেশের বাজারে বান্দরবানে প্রক্রিয়াজাত কাজুবাদাম বিপণন করছেন বলে জানান কারখানার লোকজন।
কিষাণঘর কারখানার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, কারখানায় গড়ে প্রতি মাসে চার টন কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। কারখানার আকার বাড়ানোর জন্য বাগানিদের সঙ্গে চুক্তি করে কাঁচামালের জোগান বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে একদিকে বাগানিরা যেমন বাজার পেলেন, তেমনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষও কাঁচামাল জোগানের নিশ্চয়তা পেল।
বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ রায় বলেন, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানে সবচেয়ে বেশি কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়। সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে কিষাণঘর অ্যাগ্রো কারখানা গড়ে উঠেছে। এর ফলে আমদানি–নির্ভরতা কমছে এবং দেশি বাদাম কম দামে ভোক্তারা পাচ্ছেন।