সরকার পতনের পর পটুয়াখালীর বাউফলে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের অনেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। এই সুযোগে উপজেলার ইজারা দেওয়া ২৫টি হাট ও বাজার, বাসস্ট্যান্ড, টেম্পোস্ট্যান্ড, ফেড়িঘাট ও তিনটি খেয়াঘাট দখল করেছেন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের কর্মী-সমর্থকেরা।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এগুলো ইজারা দেওয়া হয়েছিল। ইজারাদারেরা সবাই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। ইজারার মেয়াদকাল চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত।
বাউফলের বড় হাটগুলোর অন্যতম ‘কালাইয়া হাট ও বাজার’। যার ইজারামূল্য ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। প্রতিদিন বাজার বসলেও সপ্তাহে হাট বসে সোমবার। এদিন এই হাটে কয়েক হাজার গবাদিপশু (গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া) বেচাকেনা হয়। এ হাটের দখল ও ইজারা তোলার নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপির তিনটি পক্ষ।
এদিকে হাটের ইজারাদার উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কালাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফয়সাল আহমেদ ওরফে মনির হোসেন মোল্লা তাঁর লোকজন দিয়ে খাজনা ওঠানোর জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এগুলো ইজারা দেওয়া হয়েছিল। ইজারাদারেরা সবাই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। ইজারার মেয়াদকাল চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরকারের সমর্থনে ৪ আগস্ট সকালে মনির হোসেনের নেতৃত্বে দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মিছিল বের করা হয়। পরদিন ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পর মনির হোসেন এলাকাছাড়া। আজ সোমবার কালাইয়া হাটের খাজনা আদায় নিয়ে সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরকার পতনের পর থেকে কালাইয়া, বগা, হাজির হাট, নুরাইনপুর, কালিশুরী, কনকদিয়া, বিলবিলাস, ছয়হিস্যা, নগরের হাট, কাছিপাড়া চৌমোহনী, ধুলিয়াসহ ২৫টি হাটবাজার দখল করে খাজনা আদায় করছেন স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। একইভাবে বাউফল বাসস্ট্যান্ড, বগা লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, পৌর শহরের কয়েকটি টেম্পোস্ট্যান্ডসহ বাউফল-ঢাকাগামী বাস কাউন্টারগুলো দখল করে নিয়েছেন বিএনপির স্থানীয় কর্মী-সমর্থকেরা। দখল করে নিয়েছেন কালাইয়া ও নিমদি খেয়াঘাট।
কালাইয়া বাজারের ইজারাদার ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিনসহ কয়েকজন মাছ ও সবজিমহল দখল করে খাজনা আদায় করছেন। এ ব্যাপারে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ওই সব দখলবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিত আবেদন করেছেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে গিয়াস উদ্দিন বলেন, তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য ফয়সাল আহমেদ অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান হাসান অভিযোগ করেন, পৌর শহরের টেম্পোস্ট্যান্ড ও বাসস্ট্যান্ড পৌর বিএনপির বহিষ্কৃত সভাপতি হুমায়ন কবিরের নেতৃত্বে দখল করে টোল আদায় করা হচ্ছে।
পুলিশের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যিনি ইজারাদার, তিনিই খাজনা আদায় করবেন।বশির গাজী, ইউএনও, বাউফল
তবে হুমায়ন কবির বলেন, ‘আমার ও দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এ অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমার নেতৃত্বে টেম্পোস্ট্যান্ড ও বাসস্ট্যান্ড দখল হয়েছে প্রমাণ করতে পারলে যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেব।’
ইউএনও বশির গাজী বলেন, ‘কালাইয়া হাট ও বাজারের ইজারাদার ফয়সাল আহম্মেদসহ কয়েকজন হাটবাজারের ইজারাদার তাঁর কাছে অভিযোগ করেছেন। পুলিশের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তিনি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যিনি ইজারাদার, তিনিই খাজনা আদায় করবেন।