বগুড়ার ধুনট থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার আলামত নষ্ট করার অভিযোগের সত্যতা পায়নি তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ওসিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে মামলার প্রধান আসামি ধুনটের জালশুকা হাবিবর রহমান ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের শিক্ষক মুরাদুজ্জামান ওরফে মুকুলের (৪৯) বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে সংস্থাটি।
আজ রোববার বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুমিন হাসানের আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজ আলী। তবে মামলার বাদী পিবিআইয়ের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে পুনঃ তদন্তের আবেদন করার কথা জানিয়েছেন।
আলোচিত ধর্ষণ মামলার শুরুতে তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন ধুনটের তৎকালীন ওসি কৃপা সিন্ধু বালা। ২০২২ সালের আগস্টে তাঁর বিরুদ্ধে মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগ তুলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন বাদী। অভিযোগ আমলে নিয়ে ওসিকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওসিকে প্রত্যাহার এবং মামলার তদন্তের দায়িত্ব গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দেওয়া হয়। পরে বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব পায়। প্রায় দুই বছর তদন্তের পর পিবিআই আজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে বলা হয়, কলেজশিক্ষক মুরাদুজ্জামান ২০২১ সালে ধুনটের একটি এলাকায় বাসা ভাড়া করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন। ওই বাসার মালিকের মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ত। ওই ছাত্রীর মা-বাবা পেশাগত কারণে বেশির ভাগ সময় বাসার বাইরে থাকতেন। অভিযুক্ত শিক্ষকের স্ত্রীও কর্মসূত্রে দিনের বেলা বাইরে থাকতেন। এই সুযোগে মুরাদুজ্জামান কৌশলে স্কুলছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে মুঠোফোনে ছবি তোলেন। পরে ওই ছবি দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন। ২০২২ সালের ১২ মে আবার ধর্ষণের চেষ্টা করলে ওই ছাত্রী চিৎকার দেয়। তখন স্বজনেরা ছুটে এলে মুরাদুজ্জামান পালিয়ে যান। এরপর ওই ছাত্রীর কিছু অশালীন ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে মুরাদুজ্জামান গ্রেপ্তার হন। তখন তাঁর মুঠোফোন জব্দ করা হয়।
বাদীর লিখিত অভিযোগে বলা হয়, মামলার তদন্ত করছিলেন ওসি কৃপা সিন্ধু বালা। তিনি আসামি মুরাদুজ্জামানকে রিমান্ডে এনে তাঁর আরও একটি মুঠোফোন জব্দ করেন। ওই মুঠোফোনে পাওয়া কয়েকটি অশালীন ভিডিও ক্লিপ সিডিতে কপি করে নেন ওসি। এসব সিডি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানোর কথা বলে তিনি নষ্ট করেন। সিডিগুলো না পাঠিয়ে শুধু মুঠোফোন দুটি সিআইডিতে পাঠান তিনি। আসামিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ওসি কৃপা সিন্ধু বালা মামলার আলামত নষ্ট করেন বলে অভিযোগ করা হয়।
আজ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর নিজ কার্যালয়ে ব্রিফ করেন পিবিআইয়ের বগুড়ার পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবীর। তিনি বলেন, মামলায় জব্দ করা তিনটি মুঠোফোন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য আদালতের নির্দেশে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়। এ ছাড়া র্যাবের ফরেনসিক ল্যাবসহ আরও কয়েক জায়গায় আলামত পাঠানো হয়। ফরেনসিক প্রতিবেদন ও বিশেষজ্ঞর মতামতের ভিত্তিতে তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ধর্ষণের কোনো অশ্লীল ভিডিও বা স্থিরচিত্র মুঠোফোনে ধারণ করা হয়নি বা মুছে ফেলা হয়নি। ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে করা ভিডিও মুছে দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ জন্য তাঁকে বাদ দিয়ে মামলার প্রধান আসামি মুরাদুজ্জামানকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।