৫ আগস্টের গণ–অভ্যুত্থান কোনো সংবিধান মেনে হয়নি, তেমনি উপদেষ্টা পরিষদ যে ক্ষমতায় বসেছে তা–ও কোনো সংবিধানের আলোকে হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার। আজ শনিবার শরীয়তপুরে দলটির জেলা পর্যায়ের রুকন সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমি প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টাদের প্রতি আবেদন জানাব, অনেক চক্রান্তকারী সংবিধানের দোহাই দিয়ে রাজনৈতিক সংকটকে জিইয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু একটা কথা পরিষ্কার মনে রাখতে হবে, গণ-অভ্যুত্থান কোনো সংবিধান মেনে হয়নি। আপনারা যে উপদেষ্টা পরিষদ ক্ষমতায় বসেছেন, এটাও কোনো সংবিধানের আলোকে হয়নি। জনগণের আকাঙ্ক্ষায় বিপ্লব হয়েছে। জনগণের আকাঙ্ক্ষায় মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। তাই ছাত্র–জনতার গণ–আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক সংকট আপনাদেরই মোকাবিলা করতে হবে। এ দায়িত্ব সরকারের। আমরা বলেছি, এই সংকট নিরসনে জাতিকে বিভক্ত করা যাবে না। সব দল মিলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
সরকারের চ্যালেঞ্জের বিষয়ে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এ সরকারের সামনে কতগুলো নতুন চ্যালেঞ্জ ও নতুন ঝুঁকি দেওয়া হয়েছে। ওই ফ্যাসিবাদের দোসররা দেশে ও দেশের বাইরে বসে নতুন সরকারের সামনে এ চ্যালেঞ্জগুলো ছুড়ে দিয়েছেন। দলবাজ কিছু বিচারপতি অন্তর্বর্তী সরকারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পাঁয়তারা করেছিলেন। ছাত্র–জনতা ও আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী তা নস্যাৎ করে দিয়েছে। ওই দলবাজ বিচারপতিরা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।’
শরীয়তপুর জেলা জামায়াতের আমির আবদুর রব হাশেমী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। সম্মেলনে কেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ের জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন।
নির্বাচনের বিষয়ে বর্তমান সরকারের উদ্দেশে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘রাষ্ট্রের সব গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। একটা অরাজনৈতিক ও অন্তর্বর্তী সরকার একা এটা সংস্কার করতে পারবে না। এ জন্য আমরা বলেছি, সব সংস্কারের দরকার নেই। কিছু সংস্কার করে নির্বাচনটা দ্রুত দিন। ইলেকশন করার জন্য যতটুকু সংস্কার করা প্রয়োজন ততটুকু সময় জামায়াতে ইসলামী এ সরকারকে দেবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, দীর্ঘ সময়ও নেবেন না, আবার কম সময়েও কিছু করা যাবে না। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ছয় মাস হোক আর এক বছর হোক, সেটাই যৌক্তিক সময়। আমরা একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। খুব বেশি সময় নিলে ওই ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা আবার অরাজকতা সৃষ্টি করবে।’
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের দোসররা হিন্দু ভাইদের উসকে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ মনে করে হিন্দুরা তাদের রিজার্ভ ভোট, আওয়ামী লীগ প্রচার করে তারা ক্ষমতায় না থাকলে হিন্দুরা নিরাপদ থাকে না। তাদের উসকে দিয়ে পূজার সময় দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমরা তাদের এ চক্রান্ত রুখে দেওয়ার জন্য জামায়াত-শিবির, বিএনপি মিলে লাঠি হাতে সেই মন্দির পাহারা দিয়েছি। আমরা মিলেমিশে থাকব। সাংবিধানিকভাবে একজন মুসলিমের যে অধিকার, একজন হিন্দুরও ঠিক সেই অধিকার। এখানে কোনো সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু নেই। আমরা মিলমিশে দেশটাকে গড়ব।’