বরিশাল মহানগরের ৩০টি ওয়ার্ডে বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে তীব্র অসন্তোষ অব্যাহত আছে। আজ বুধবার বিকেলে নগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রতিক্রিয়ায় সেখানে বিক্ষোভের আয়োজন করেন দলের একাংশের নেতা–কর্মীরা। এতে হামলা চালিয়েছেন মহানগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সমর্থকেরা। এতে বিক্ষোভকারী পক্ষটির অন্তত ১০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁরা বরিশাল সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
পদবঞ্চিত নেতারা অভিযোগ করেন, আজ বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁরা নগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভাটিখানা এলাকা থেকে নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেন। মিছিলটি স্থানীয় কাজী অফিস এলাকায় পৌঁছালে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খানের উপস্থিতিতে তাঁর লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিলে হামলা করেন। এ সময় বিক্ষোভকারী নেতা-কর্মীদের এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। পরে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় আবদুস সালাম খান, শহিদুল ইসলাম, মো. তারেক, রুহুল আমিনসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।
৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, ৬ অক্টোবর ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে মহানগর বিএনপি। এতে ফারুক শরিফকে আহ্বায়ক ও বর্তমান ওয়ার্ড যুবদলের সদস্যসচিব আমির খসরুকে সদস্যসচিব করা হয়। এ কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেন সাবেক পূর্ণাঙ্গ কমিটির নেতারা। শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, নতুন আহ্বায়ক কমিটির নেতারা দলের কার্যক্রমে কখনো সক্রিয় ছিলেন না। তাঁরা বর্তমান নগর আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের ঘনিষ্ঠ, এ জন্য পদ পেয়েছেন। এই পকেট কমিটি বাতিল দাবি করেন তাঁরা। আজ বিকেলে বিক্ষোভের আয়োজন করা হলে মহানগর আহ্বায়কের উপস্থিতিতে তাঁদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান তাঁর সমর্থকেরা।
দলীয় সূত্র জানায়, কমিটি বাতিল দাবি করে এরই মধ্যে ৮, ১১, ১৩, ১৪, ১৫ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিক্ষোভ হয়েছে। অন্য ওয়ার্ডগুলোতেও বিক্ষোভের আয়োজন চলছে।
তবে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান হামলা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি একটি জানাজায় অংশ নিতে গিয়েছিলাম। তাই এ বিষয়ে কিছুই জানি না। যদি কেউ এ ধরনের অভিযোগ করে থাকে তবে তা মিথ্যা।’
দলীয় সূত্র জানায়, বরিশাল মহানগরের ৩০টি ওয়ার্ডের কমিটি ভেঙে দিয়ে বর্তমানে সব ওয়ার্ডে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে গত দেড় মাসে ১৬টি ওয়ার্ডে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটিতে আগের কমিটির নেতা-কর্মীরা প্রাধান্য না পাওয়ায় সব ওয়ার্ডেই অসন্তোষ ও বিক্ষোভ চলছে। ৬ অক্টোবর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৪ যুগ্ম আহ্বায়ক ও ১২ সদস্য পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ওই দিন তাঁরা নগরের সাগরদি এলাকায় বিক্ষোভ করেন কমিটি বাতিল দাবিতে।
বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, দলের অঙ্গসহযোগী সংগঠনে পদ-পদবি আছেন এমন কাউকে বিএনপির কোনো পদে রাখা যাবে না। রাখতে হলে অবশ্যই তাঁকে আগের পদ-পদবি ত্যাগ করে নতুন পদ দিতে হবে। কিন্তু সব ওয়ার্ডেই সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে অঙ্গসহযোগী সংগঠনে পদ-পদবি রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের দায়িত্বে আনা হয়েছে। প্রকৃত ত্যাগীদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাদ দিয়ে মহানগর আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব নিজেদের পছন্দের লোকদের দিয়ে কমিটি করেছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, কমিটি বাতিল দাবি করে এরই মধ্যে ৮, ১১, ১৩, ১৪, ১৫ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিক্ষোভ হয়েছে। অন্য ওয়ার্ডগুলোতেও বিক্ষোভের আয়োজন চলছে। দলীয় নেতা-কর্মীরা এসব কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিল করার দাবি জানান পদবঞ্চিত নেতারা।
দলীয় সূত্র জানায়, বরিশাল মহানগরের ১৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে দিয়ে গত বছরের ৩ নভেম্বর আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। কমিটিতে মনিরুজ্জামান খানকে আহ্বায়ক, আলী হায়দারকে ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক ও মীর জাহিদুল কবিরকে সদস্যসচিব করা হয়। এরপর গত ২২ জানুয়ারি ৪১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখানে আগের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কেউ স্থান পাননি।
মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে চলা দ্বন্দ্ব ও বিতর্কের মধ্যে গত ১১ মার্চ সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, এটা আহ্বায়ক কমিটি, পূর্ণাঙ্গ কমিটি নয়। ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতে অনেককেই পদ দেওয়া সম্ভব নয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে ৭১ সদস্যের। তখন বাদপড়া নেতারাও পদ পাবেন।