সিলেট নগরের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আজ বৃহস্প‌তিবার সকালে নগরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকায়
সিলেট নগরের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আজ বৃহস্প‌তিবার সকালে নগরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকায়

সিলেটে রাতে বৃষ্টি না হলেও কমেনি পানিবন্দী মানুষের ভোগান্তি

সিলেটে গতকাল বুধবার সারা দিন বৃষ্টির পর রাতে বৃষ্টি হয়নি। তবে এতে পানিবন্দী লোকজনের ভোগান্তি কমেনি। রাতে বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে এমন আশা করা হলেও আজ বৃহস্পতিবার সকালে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ফলে পানিবন্দী লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে গতকাল বুধবার রাতে বৃষ্টি রেকর্ড হয়নি। সিলেটে আগামী দুই দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।

আজ সকাল ৯টায় সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার ছয়টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে গোয়াইনঘাটের সারি নদীর পানি আজ সকাল থেকে বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে সিলেটে বৃষ্টি কম হওয়া এবং ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসায় নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টির ওপর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির বিষয়টি নির্ভর করছে। পাহাড়ি ঢল নামার ফলে নদ-নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

সিলেট নগরের জলাবদ্ধ এলাকাগুলোয় পানি কিছুটা কমলেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। নগরের শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, মীরাবাজার, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, তোপখানা, বেতেরবাজার, তালতলা, জামতলা, মাছুদীঘিরপাড় ও মণিপুরি রাজবাড়ি এলাকা জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।

সিলেট নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা ফাহাদ মো. হোসেন বলেন, ঈদের দিন থেকে পানিবন্দী অবস্থায় ঘরে ছিলেন। ঈদের দিন পানির জন্য কোরবানি দিতে পারেননি। ঈদের দ্বিতীয় দিন ঘরের ছাদে কোরবানি দিয়েছেন। তার ঘরের নিচে কোমরসমান পানি। এ জন্য ঈদের দিন ও পরের দিন বের হতে পারেননি। তবে বুধবার সন্ধ্যার পর বৃষ্টি কিছুটা কমায় পানিও কিছুটা কমে গেছে। দুই দিন ঘরবন্দী থাকার পর বুধবার রাতে তিনি বের হতে পেরেছেন।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, নগর ও জেলার মোট ১২৯টি ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন ২০ হাজার মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রসহ বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য রান্না করা ও শুকনা খাবারসহ বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হচ্ছে।

এর আগে ২৯ মে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটে বন্যা দেখা দেয়। ৮ জুনের পর থেকে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। সর্বশেষ গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে আবার সিলেটে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে নগরের ২৩টি ওয়ার্ডসহ জেলার ১৩টি উপজেলার ১ হাজার ৫৪৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় আক্রান্ত জনসংখ্যা প্রায় সোয়া ৮ লাখ।