পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে বকেয়া বিল নিয়ে মামলা চলমান। সেই জটিলতায় নবনির্মিত বাস টার্মিনালে এখনো বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হয়নি।
মাদারীপুরে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক বাস টার্মিনাল। নির্মাণের এক বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও বিদ্যুৎ–সংযোগসহ নানা জটিলতায় টার্মিনালটি চালু করতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। টার্মিনালের অভাবে আন্তজেলা ও দূরপাল্লার বাসগুলো মহাসড়কের দুই পাশে দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামার কাজ চলছে। এতে যানজটের পাশাপাশি যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, বিদ্যুৎ–সংযোগের কাজ বাকি। তারা মৌখিকভাবে টার্মিনালটি পৌর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। বকেয়া বিল নিয়ে পৌরসভার সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের ঝামেলা থাকায় সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। পৌর কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, বিদ্যুৎ বিভাগ সংযোগ না দেওয়ায় টার্মিনালটি উদ্বোধন করতে দেরি হচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে আবেদন করলে তারা সংযোগ দেবে। পৌর কর্তৃপক্ষ সেটা করেনি।
মাদারীপুর পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আধুনিক বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য পৌরসভার গৈদি মৌজার পাকদী এলাকায় ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ একর ৩৭ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে পৌর কর্তৃপক্ষ। বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ২০১৮ সালের নভেম্বরে বাস টার্মিনাল নির্মাণের কাজটি পায় ফরিদপুরের ‘আলাউদ্দিন ট্রেডিং কোং লিমিডেট’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। টার্মিনাল নির্মাণে প্রথম পর্যায়ে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। নকশা পরিবর্তনের পর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ কোটি ৮৪ লাখ ৩০ হাজার ১৭৭ টাকা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নানা অজুহাতে তিন দফায় তিন বছর কাজের মেয়াদ বাড়ায়। সর্বশেষ গত বছরের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান প্রকৌশলী মো. ফজলুর হক প্রথম আলোকে বলেন, টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ। সংযোগ না থাকায় বিদ্যুতের কিছু কাজ বাকি আছে। তাঁরা মৌখিকভাবে পৌর কর্তৃপক্ষকে টার্মিনালটি হস্তান্তর করেছেন। তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে পৌরসভার কিছু বকেয়া বিল নিয়ে ঝামেলা চলছে। এ জন্য তারা বিদ্যুৎ–সংযোগ দিচ্ছে না।
মাদারীপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবুল কালাম বলেন, ‘আমাদের আধুনিক বাস টার্মিনালটি প্রস্তুত। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ সংযোগ দিচ্ছে না। এ কারণে আমরা উদ্বোধন করতে পারছি না। বিদ্যুৎ–সংযোগ না দেওয়া নিয়ে আমাদের মেয়রের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিকবার মিটিং হয়েছে। আমরা আশাবাদী, শিগগিরই টার্মিনালের কার্যক্রম চালু হবে।’
গত শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশাল বাস টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হলেও ভেতরে কোনো যানবাহন নেই। টার্মিনালের প্রবেশপথ তালাবদ্ধ। টার্মিনালের সামনে মহাসড়কের দুই পাশে সারি সারি দূরপাল্লার বাস দাঁড় করিয়ে রাখা। টার্মিনালের সামনে চেয়ার–টেবিল বসিয়ে অস্থায়ী কাউন্টার খুলে কার্যক্রম চলছে।
মাদারীপুর সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘টার্মিনাল চালু না হওয়ায় আমরা মহাসংকটে আছি। বর্ষাকালে বাস রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা যায় না। দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া টার্মিনাল চালু না থাকায় যাত্রীরাও চরম দুর্ভোগ পোহান। এটি চালুর জন্য আমরা পৌর কর্তৃপক্ষকে অনেক অনুরোধ করে যাচ্ছি। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সালে মাদারীপুর পৌরসভার অধীন ২১টি মিটারে ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে বলে জানায় ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল উল্লেখ করে ওই বছরের জুলাই মাসে আদালতে একটি মামলা করেন মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন। এখনো মামলাটি আদালতে চলমান। বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে পৌরসভার ওই জটিলতার সমাধান না হওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগ টার্মিনালে বিদ্যুৎ–সংযোগ দিচ্ছে না।
মাদারীপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার আবু আহমদ ফিরোজ ইলিয়াস বলেন, ‘আমাদের ২১টি মিটারের বিল বকেয়া ছিল। ইতিমধ্যে একটি বিল যাচাই-বাছাই করে পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি বিলগুলো যাচাই-বাছাই করে পরিশোধ করা হবে। এ ছাড়া মামলা তো চলছেই। টার্মিনালের কাজ শেষ হওয়ার পর আমরা বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু তারা সংযোগ দেয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে আমাদের মতবিরোধ ছিল। সেটা সমাধান হয়ে গেছে। আশা করছি, দ্রুত তারা সংযোগ দেবে।’
জানতে চাইলে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মাদারীপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, টার্মিনালে বিদ্যুৎ–সংযোগের জন্য পৌরসভা থেকে পূর্ণাঙ্গ আবেদন করা হয়নি। যথাযথভাবে আবেদন করলে তাঁরা বিধি অনুযায়ী বিদ্যুৎ–সংযোগ দেবেন। তিনি বলেন, ‘এক বছর আগে টার্মিনালে বিদ্যুৎ–সংযোগ পেতে তাঁরা একটি চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, টার্মিনালে বিদ্যুৎ–সংযোগ প্রয়োজন। কিন্তু এভাবে চিঠি দিলে তো সংযোগ দেওয়া সম্ভব না। ফিরতি চিঠি দিয়ে আমরা যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে আবেদন করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু তাঁরা আবেদন করেননি।’