‘ছোট ছোট দুই পোলা লইয়া কই যামু আমি’

নিহত মোস্তাকের স্ত্রী জোনাকি বেগম ও ছোট ছেলে তাসমিন। সোমবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের
ছবি: প্রথম আলো

তিন বছর আগে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে ব্যবসা শুরু করেছিলেন মোস্তাক আহমেদ (৪২)। বর্তমানে তাঁর ব্যবসার অবস্থা তেমন ভালো নয়। এ কারণে আবারও তিনি সিঙ্গাপুরে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট তৈরি করছিলেন।

আজ রোববার পাসপোর্ট অফিসে ছিল তাঁর আঙুলের ছাপ দেওয়ার দিন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসেই মোস্তাক সিঙ্গাপুর যেতেন। কিন্তু তাঁর যাওয়া হলো না। আজ মাদারীপুরের শিবচরের পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের কুতুবপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে ১৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহত মোস্তাক তাঁদেরই একজন।

দুই সন্তান নিয়ে স্ত্রী জোনাকি বেগম আজ দুপুরে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোস্তাকের লাশ নিতে আসেন। নিহত মোস্তাক গোপালগঞ্জের বনগ্রাম এলাকার সামসুর হকের ছেলে। দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এককোণে বসে কান্না করছিলেন জোনাকি। কান্নারত অবস্থায় জোনাকি বলেন, ‘আমার সব শ্যাষ হইয়া গেল। ছোট ছোট দুই পোলা লইয়া কই যামু আমি? আমাগো দেখার জন্য স্বামী ছাড়া কেউ নাই। আল্লাহ, তুমি আমারে মরণ দিতা। আমার স্বামীকে ফিরাইয়া দাও তুমি।’

জোনাকি বেগমকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন এক স্বজন। পাশে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছেলে। সোমবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের

জোনাকির সঙ্গে এসেছেন তাঁর ভাই মো. সেলিম। তিনি বলেন, ‘আমার বোনের দুই ছেলে। বড় ছেলে ঈশানের বয়স আট বছর, ছোট ছেলে তাসমিনের চার বছর। ছোট ছেলেটা বোঝে না যে ওর বাবা আর নাই। বাবাকে দেখার জন্য আমার কাছে এসে বারবার কান্নাকাটি করতেছে। ওদের নিয়া আমি কী করব বুঝতে পারছি না।’

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নারীসহ ১৯ জন মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ২৫ জন শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ১০ জন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬ জনের নাম–পরিচয় পাওয়া গেছে। বেলা তিনটার মধ্যে ১৬ জনের লাশই তাঁদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। একটি লাশের পরিচয় এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। অন্য লাশ দুটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে।