উপজেলা প্রশাসন দুই বছর আগে ব্যবসায়ীদের বিদ্যালয়ের সামনে থেকে উচ্ছেদ করেছিল। ধীরে ধীরে তা আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সদরের উচালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই দিকে প্রতিদিন মাছ ও শাকসবজিসহ নিত্যপণ্যের বাজার বসে। এতে পচা আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। উপজেলা প্রশাসন দুই বছর আগে ব্যবসায়ীদের বিদ্যালয়ের সামনে থেকে উচ্ছেদ করেছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে বর্তমানে পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।
গত সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, উচালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশ দিয়ে চলে গেছে সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়ক। উত্তর পাশে রয়েছে সড়ক ও জনপথের (সওজ) পরিত্যক্ত জায়গা। দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি গ্রামীণ সড়ক। বিদ্যালয়টির পূর্ব ও উত্তর পাশের শ্রেণিকক্ষ ঘেঁষে অন্তত ৩০ জন ব্যবসায়ী পসরা সাজিয়ে শাকসবজিসহ নানা সামগ্রী বিক্রি করছেন। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সড়কের পূর্ব পাশে ২০ মিটারের মধ্যে বসেছেন ২০-৩০ জন মাছ ব্যবসায়ী।
কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, যোগাযোগ–সুবিধার কারণে এটি এখন উপজেলা সদরের প্রধান মাছের বাজার হয়ে উঠেছে। কয়েক বছর ধরে বিদ্যালয়ের পাশে প্রতিদিন সকাল ছয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত এ বাজার বসে।
শিক্ষকেরা বলেন, ‘প্রতিদিন বিদ্যালয়টির একমাত্র ফটকের সামনে এবং শ্রেণিকক্ষের পাশে বড় পরিসরে বাজার বসার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। বাজার চলাকালে এবং পরে বিদ্যালয়টির দক্ষিণে ফেলা হয় মাছের নোংরা পানি আর ময়লা–আবর্জনা। এতে স্থানটি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এ ভাগাড়ের দুর্গন্ধে তাঁরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলে, ‘স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় মানুষের ভিড় আর ক্লাসে দুর্গন্ধে তাদের স্কুলে আসতে ভালো লাগে না।’
সহকারী শিক্ষক আমির হামজা বলেন, ‘এটি উপজেলার সেরা একটি স্কুল। কিন্তু বাজারের পচা আবর্জনার দুর্গন্ধে বিদ্যালয়ে ঠেকা দায়। আমরা প্রতিনিয়ত ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়েও ঠিকভাবে ক্লাস নিতে পারছি না। এ ছাড়া এ বাজারের কারণে বিদ্যালয়টির সামনের সড়কে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।’
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রুহুল আমীন প্রথম আলোকে বলেন, স্কুলের সামনের সড়কের পাশে মাছ বাজারের কারণে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এ ছাড়া সড়কে দীর্ঘ সময় ধরে যানজট লেগে থাকে। বিদ্যালয়ের সামনে যেন দোকান বসতে না পারে, এ জন্য আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি। বাজারের স্থান পরিবর্তনের জন্যও আমরা চেষ্টা করছি।’
প্রধান শিক্ষক শামছুন নাহার সুলতানা হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য আমাদের সকাল নয়টা থেকে বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত অবস্থান করতে হয়। অথচ এ সময় এখানে থাকে পুরোদমে বাজার। একদিকে দুর্গন্ধ আর মানুষের কোলাহল, অন্যদিকে সড়কে থাকে দীর্ঘ যানজট। বিদ্যালয়ের আশপাশে মাছ ও শাকসবজির বাজারের কারণে ৯ শিক্ষক আর ৩৫৭ শিক্ষার্থীকে নিয়ে ভোগান্তিতে রয়েছি। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের একমাত্র ফটকের সামনে সড়ক ও জনপথের (সওজ) বড় দুটি গাছ বেড়ে উঠেছে। এ দুটি গাছের কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের আশপাশে বাজার বসার কারণে বিদ্যালয়টির পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেব নেব।’