বরগুনায় ৭৫০টি জলকপাট আছে। আরও ২৮টি নতুন জলকপাট নির্মাণের কার্যক্রম চালু আছে।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ার-ভাটার পানি থেকে উপকূলের এলাকা রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় নদীর সঙ্গে সংযোগ খালগুলোর প্রবেশদ্বারে জলকপাট নির্মাণ করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল, অস্বাভাবিক পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ। তবে কৃষকদের অভিযোগ, বর্তমানে এসব জলকপাটের কারণে খালগুলোতে পানি নেই বললেই চলে। সেচের পানির অভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, জলকপাট দিয়ে জোয়ারের সময় যে পরিমাণ পানি প্রবেশ করে, ভাটার সময় সে পানি নামে না। এ কারণে পলি জমে খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এদিকে, চাষাবাদের জন্য সময়মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না পাওয়ায় কৃষিকাজ হুমকির মুখে পড়ছে।
খালের প্রবেশদ্বারে জলকপাট নির্মাণের কয়েক বছর পর থেকে এলাকায় পানির সংকট দেখা দেয়। এখন খালটি ভরাট হয়ে গেছে।নজরুল ইসলাম, কৃষক, সদর উপজেলা
পাউবো বরগুনা কার্যালয় সূত্র জানায়, দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকা ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য ষাটের দশকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। জেলার শাখা খালগুলোর সংযোগ দ্বারে বিভিন্ন সময় বরগুনায় ৭৫০টি জলকপাট নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ২৮টি নতুন জলকপাট নির্মাণের কার্যক্রম চালু আছে।
সরেজমিন দেখা যায়, বরগুনা সদর উপজেলা বদরখালী ইউনিয়নের কুমরাখালী থেকে বদরখালী এলাকা পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ খালের দুই প্রান্তে দুটি জলকপাট রয়েছে। বর্তমানে খালটি পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে। একই অবস্থা গৌরিচন্না ইউনিয়নের লাকুরতলা খালের। স্থানীয় লোকজন বলেন, এই খাল দিয়ে একসময় ট্রলারে মানুষ যাতায়াত করত। খালের সংযোগ দ্বারে জলকপাট নির্মাণ করা হলে খালটি ভরাট হয়ে যায়। এতে এলাকায় কৃষিকাজের পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
সদর উপজেলা গুলিশাখালী গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, বিষখালী নদীর সঙ্গে খালটির সংযোগ ছিল। তখন এলাকায় সব ধরনের ফসল আবাদ করা হতো। খালের প্রবেশদ্বারে জলকপাট নির্মাণের কয়েক বছর পর থেকে এই এলাকায় পানির সংকট দেখা দেয়। বর্তমানে খালটি ভরাট হয়ে গেছে। জলকপাটটি তাঁরা কেটে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন, তাহলে তাঁর মতো কৃষক বাঁচবে।
লাকুরতলা এলাকার কৃষক খলিলুর রহমান বলেন, এই খাল দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রলার চলাচল করত। এখন খাল ভরাট হওয়ার কারণে কৃষকেরা বোরো, আমনসহ রবি শস্য আবাদের সময় পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে আশানুরূপ ফসল উৎপাদিত হচ্ছে না।
তালতলি উপজেলার পচাকোড়ালীয়া এলাকাতেও একটি বড় জলকপাট আছে। সে জলকপাটের ফলে খালে জোয়ারে উঠে আসা পানি বের হতে পারছে না। এতে জোয়ারের পানির সঙ্গে উঠে আসা পলি জমে খাল ভরাট হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, জলকপাট কার্যকর না থাকলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে কৃষিতে। লবণপানি আর জলাবদ্ধতা—দুই দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক। এলাকায় অপরিকল্পিত জলকপাটের কারণে পলি জমে খাল ভরাটের কারণে চাষাবাদের সময় পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
বরগুনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, যেসব খাল ভরাট হয়ে গেছে, তা খননের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পাঠানো হবে।