প্রথম দিকে প্রায় পাঁচ বছর এই ইনডোর স্টেডিয়াম রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠানের ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।
‘বাস্কেটবল একটা ইনডোর গেম। মাগুরায় একটা ইনডোর স্টেডিয়াম থাকলেও আমরা সেখানে খেলার সুযোগ পাই না।’ মাগুরা শেখ কামাল ইনডোর স্টেডিয়াম ও জিমনেসিয়াম সম্পর্কে জেলার বাস্কেটবল খেলোয়াড় আশিকুর রহমানের বক্তব্য এটি। মাগুরার অনেক খেলোয়াড়েরই এমন অভিযোগ। তাঁরা বলছেন, জেলায় ইনডোর স্টেডিয়াম থাকলেও সেখানে সাধারণ খেলোয়াড়দের জন্য অনুশীলন বা খেলার সুযোগ নেই। বেশির ভাগ সময় এর ফটক তালাবদ্ধ থাকে। নামে জিমনেসিয়াম হলেও খেলোয়াড়দের জন্য এখানে শরীরচর্চার কোনো সুযোগ-সুবিধাও নেই।
বাস্কেটবল খেলোয়াড় আশিকুর বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে মাগুরায় বাস্কেটবল খেলছি। গত বছর খুলনায় একটা টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার আগে ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুশীলন করার জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এখানে বাস্কেটবল খেলার কোনো সুযোগ নেই। অথচ দুই পাশে দুটি বাস্কেট লাগিয়ে দিলে আমরা খেলতে পারি। আমরা দিনে দু-তিন ঘণ্টা অনুশীলন করার সুযোগ পেলেও মাগুরা থেকে ভালো খেলোয়াড় তৈরির সুযোগ পেত।’
স্থানীয় খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেখ কামাল ইনডোর স্টেডিয়াম চালুর পর এটা কখনোই সাধারণ খেলোয়াড়দের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। প্রথম দিকে প্রায় পাঁচ বছর এটা রাজনৈতিক সভাসমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠানের ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। ২০২২ সালের শুরুতে এখানে একটি লন টেনিস মাঠ তৈরি করা হয়। এর মাঝে এখানে একটি টেনিস ও দুবার দাবা টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া এখানে খেলাধুলার তেমন কোনো আয়োজন চোখে পড়েনি খেলোয়াড়দের।
এদিকে ইনডোর স্টেডিয়ামে টেনিস খেলারও সুযোগ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় টেনিস খেলোয়াড়দের একজন নওশাদ জং জুয়েল। গত রোববার প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ছয় মাসের বেশি সময় ইনডোরে টেনিস খেলা বন্ধ রয়েছে। বেশ কিছু বাতি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেগুলো সংস্কার করা হয়েছে। তবে মাঠটি এখনো খেলার জন্য প্রস্তুত নয়।’
মাগুরা কাউন্সিল পাড়া ব্যাডমিন্টন ক্লাবের সভাপতি আলীমুল হাসান নোবেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাগুরায় ফুটবল, ক্রিকেটের পর জনপ্রিয় খেলা ব্যাডমিন্টন। ইনডোর স্টেডিয়াম হওয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম, এখানে খেলোয়াড়েরা নিয়মিত ব্যাডমিন্টন খেলার সুযোগ পাবে। কিন্তু সেটা হয়নি।’
ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাগুরায় ইনডোর খেলার মান উন্নয়ন ও খেলোয়াড়দের শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল শেখ কামাল ইনডোর স্টেডিয়াম ও জিমনেশিয়াম। ২০১৭ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অর্থায়নে এটি নির্মাণের পর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
জিমনেসিয়ামের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেন বলেন, ‘শেখ কামাল ইনডোর স্টেডিয়ামে জিমের সরঞ্জামের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে আবেদন করেছিলাম। তবে আমরা এখনো কোনো সরঞ্জাম পাইনি।’
সম্প্রতি ইনডোর স্টেডিয়ামের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি লন টেনিস কোর্ট রয়েছে। তবে মাঠে পাখির মলের আস্তরণ পড়েছে বিভিন্ন জায়গায়। একটি কক্ষে একটি টেবিল টেনিস বোর্ড রয়েছে। আর একটি কক্ষে টেনিস খেলোয়াড়দের জন্য কিছু ব্যায়ামের সরঞ্জাম রয়েছে। তবে চারদিকে ময়লার আস্তরণ বলে দিচ্ছে, দীর্ঘদিন সেগুলো ব্যবহার করা হয়নি।
জানতে চাইলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা খেলোয়াড়দের কাজে লাগে না এ অভিযোগ সঠিক নয়। এখানে টেনিস খেলা হয়। দাবা টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। স্টেডিয়ামটি খেলোয়াড়দের জন্য আরও কীভাবে কার্যকর করা যায়, সে বিষয় নিয়ে ক্রীড়া সংস্থার বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’