জাপা নেতা রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে কুয়াকাটায় জমি দখলের অভিযোগ

পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় জাপার সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে জমি দখল করার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন। শনিবার দুপুরে কুয়াকাটা প্রেসক্লাবে
ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। মো. ওসমান গনি শেখ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন।

আজ শনিবার দুপুর ১২টায় কুয়াকাটা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ওসমান গনির অভিযোগ নাকচ করেছেন রুহুল আমিন হাওলাদার। তিনি বলেছেন, ‘যাঁরা এসব অভিযোগ করেছেন, মূলত এরা প্রতারক।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুয়াকাটায় জেএল ৩৪ নম্বর লতাচাপলী মৌজার এসএ ১২৯৩ নম্বর খতিয়ানের ৫১৮৫/৫৪৭৬ নম্বর দাগের অংশ থেকে সাড়ে ২৭ শতাংশ জমির সাবকবলা খরিদ মূলে ওসমান গনি ও তাঁর ছোট ভাই মো. ছোবাহান শেখ, দোজাহান শেখ ও নুর ইসলাম শেখ মালিক বিদ্যমান আছেন। একই দাগ-খতিয়ানে ওসমান গনি শেখের আরেক ভাই মো. শাহ আলম শেখের নামে ৪ শতাংশ জমি ছিল। জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার শাহ আলম শেখের অংশের ৪ শতাংশ জমি ক্রয় করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মো. ওসমান গনি শেখ বলেন, ‘রুহুল আমিন হাওলাদার ক্ষমতার দাপটে মামলা-হামলা ও প্রশাসনের মাধ্যমে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আমাদের রেকর্ডিয় সাড়ে ২৭ শতাংশ জমি দখল করে নেন। এরপর দলিল করে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। জমি বিক্রি করতে না চাইলে রুহুল আমিন হাওলাদার নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নেন এবং একটি ভুয়া চুক্তিপত্র সৃষ্টি করে দলিল সম্পাদনে ব্যর্থ হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের জেলহাজতে পাঠান। এমনকি জমির দলিল সম্পাদন করে না দিলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। এখন জীবনের ভয়ে আমরা বাড়িঘর ছেড়ে দীর্ঘদিন ধরে পালাইয়া বেড়াইতেছি।’

ওসমান গনি শেখ বলেন, ‘আমাদের ভোগদখলীয় সাড়ে ২৭ শতাংশ জমির ওপর রুহুল আমিন হাওলাদারের কুনজর পড়েছে। পরবর্তী সময়ে রুহুল আমিন হাওলাদার আমাদের জমি কেনার প্রস্তাব দিলে আমরা তাঁর কাছে জমি বিক্রি করতে অসম্মতি জানাই। রুহুল আমিন হাওলাদার আওয়ামী স্বৈরশাসনামলে সংসদ সদস্য থাকাকালীন ক্ষমতার দাপট দেখাইয়া আমার ও আমার অপর তিন ভাইয়ের অংশের সাড়ে ২৩ শতাংশ জমি অবৈধভাবে জবর দখলে নেন। আমরা শতবার চেষ্টা করেও আমাদের জমি উদ্ধার করতে পারি নাই। আমরা আমাদের জমি উদ্ধারের চেষ্টা করলে বিবাদী তাঁর ক্ষমতার দাপট দেখাইয়া আমাদেরকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করেছেন। এমনকি আমাকে ও আমাদের পরিবারকে চিরতরে শেষ করে ফেলার হুমকি দিয়ে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়া জেলহাজত খাটাইছেন। অবশেষে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর তিনি লাপাত্তা হয়ে যান। ভূমিখেকো এই প্রভাবশালী ব্যক্তির অবৈধ দখলে থাকা জমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

আরেক ভুক্তভোগী মো. সোবহান শেখ বলেন, ‘রুহুল আমিন হাওলাদার সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী থাকাকালীন কুয়াকাটায় একাধিক জমি দখল করে নিয়েছেন। যাঁরাই এর প্রতিবাদ করেছেন, তাঁরাই মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন। তাঁর অত্যাচারে এলাকার অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছেন। আমরাও নিঃস্ব হয়ে গেছি।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আমি কারও জমি জবর দখল করিনি। ওসমান শেখ আমার কাছে বায়না চুক্তির মাধ্যমে জমি বিক্রি করেছেন। তিনি জমির টাকাও নিয়েছেন। কাগজপত্রে তাঁর মালিকানা সঠিক না থাকায় তিনি জমির দলিল দিতে না পেরে নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমি মামলা করতে বাধ্য হয়েছি। তা ছাড়া ওই জমি নিয়ে সরকারের সঙ্গে মামলা চলমান রয়েছে।’

রুহুল আমিন হাওলাদার আরও বলেন, ‘আমার বায়না চুক্তির জমিতে ওসমান শেখ নিয়মবহির্ভূতভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। ওসমান শেখ ছাড়া অন্য ওয়ারিশরা আমার কাছে সাবকবলা দলিলমূলে জমি বিক্রি করেছেন। অথচ এখন তাঁরাও বলছেন, আমরা দলিল দিইনি, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আপনারা কাগজপত্র পর্যালোচনা করলে সত্যতা বেরিয়ে আসবে।’ তিনি দাবি করেন, ‘এখন যাঁরা জমি দখলের অভিযোগ করেছেন, মূলত এঁরা প্রতারক।’