বাউফলে জনরোষে পালিয়ে গেলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোসারেফ হোসেন খান ও ভাইস চেয়ারম্যান আনিচুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

জনরোষে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোসারেফ হোসেন খান পালিয়ে যান। আজ রোববার উপজেলা পরিষদ চত্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় উত্তেজিত জনতা ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনিচুর রহমানকে লাঞ্ছিত ও মারধর করেন।

মোসারেফ হোসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও আনিচুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাঁরা দুজনই স্থানীয় সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের খুব কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত।

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শনিবার বিকেল থেকেই গুঞ্জন শুরু হয়, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোসারেফ হোসেন ও ভাইস চেয়ারম্যান আনিচুর আজ রোববার অফিস করবেন। অপর দিকে তাঁদের প্রতিহত করতে উপজেলা পরিষদ এলাকার চারপাশে গতকাল দিবাগত রাত থেকে পাহারা বসান বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সারা রাত পাহারা দেওয়ার পর ভোরে ঘুমিয়ে পড়েন তাঁরা। সেই সুযোগে সকাল সোয়া সাতটার দিকে চেয়ারম্যান মোসারেফ হোসেন ও ভাইস চেয়ারম্যান আনিচুর পরিষদ চত্বরে ঢুকে পড়েন। মুহূর্তের মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে জনরোষে পড়েন তাঁরা। ওই সময় আনিচুরকে আটক করে মারধর করে একটি বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখা হয়। পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে মোসারেফ হোসেন পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

খবর পেয়ে বেলা একটার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের একটি দল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশির গাজীর কার্যালয়ে যায়। সেখানে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে তারা আলোচনা করে। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি না করার জন্য বলা হয়।

এ সময় উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁরা (চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান) জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি, ভোট চুরি করে হয়েছেন। এ ছাড়া মোসারেফ হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অস্ত্র, লোহার পাইপ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে, বিশেষ করে ৩ ও ৪ আগস্ট বাউফলে প্রকাশ্যে মিছিল হয়েছে। তাঁদের আমরা বাউফলে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম। ছাত্র–জনতাকে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের প্রতিহত করা হবে।’

এ সময় উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আপেল মাহমুদ বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এ উপজেলায় যত লুটপাট ও নিয়োগ–বাণিজ্য হয়েছে, তা মোসারেফ হোসেনের মাধ্যমেই করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ। এ কারণে জনগণের অনেক ক্ষোভ রয়েছে মোসারেফ হোসেনের ওপর। জনরোষে পড়ে তিনি পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। বাউফলের মাটিতে তাঁদের আর কোনো দিন স্থান হবে না। আনিচুরকে মারধরের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের কেউ জড়িত নন।

নুরউদ্দিন আনসারী নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘সাবেক সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ সাহেব উপজেলা চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি করেছেন। এই সুযোগে তিনি নিয়োগ-বাণিজ্য করে ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অযোগ্যদের নিয়োগ দিয়েছেন। এভাবে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করেছেন তিনি। এ কারণেই এখন তাঁকে জনরোষে পড়তে হচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, এঁদের মতো নেতাদের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে আজ আওয়ামী লীগের এই দুরবস্থা।

আজ রাতে নিয়োগ–বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোসারেফ হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এ বিষয়ে মোসারেফ হোসেনের ছেলে মো. মোতাহার হোসেন বলেন,তাঁর বাবার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা।