গত বছরের মতো এবারও মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হারে শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে সবার নিচে সিলেটের অবস্থান। ফলাফল বিপর্যয়ের পেছনে মানবিক বিভাগে বেশি শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে কম পাস করা এবং সিলেট বিভাগে মানসম্মত শিক্ষকের অভাবকে মূল কারণ হিসেবে দেখছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড।
আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলনকক্ষে আনুষ্ঠানিক ভাবে এসএসসির ফলাফল ঘোষণা করেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুন চন্দ্র পাল। এ সময় বোর্ডের সচিব চৌধুরী মামুন আকবর, সিস্টেম অ্যানালিস্ট সরকার মো. আতিকুর রহমান, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হাবিবা বাছিত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সচিব চৌধুরী মামুন আকবর বলেন, তিনি দীর্ঘদিন সিলেটের শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। এতে সিলেটে মানসম্মত শিক্ষকের অভাব লক্ষ করেছেন। মানসম্মত শিক্ষকের অভাবে সিলেট বোর্ডের পাসের হারে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফলাফল ঘোষণাকালে সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুন চন্দ্র পাল জানান, গতবারের তুলনায় এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্তের সংখ্যা বাড়লেও পাসের হার কমেছে। সিলেট বোর্ডে এবার পাসের হার ৭৩ দশমিক ৩৫, যা গতবার ছিল ৭৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৪৭১ জন, গতবার এ সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৪৫২। গত বছর ২৩টি বিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করলেও এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১টিতে। শতভাগ পাস করেনি এমন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই।
সিলেট বোর্ডে এবারের পরীক্ষায় মোট ১ লাখ ৯ হাজার ৭৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ৮০ হাজার ৬ জন। এবার পাসের হার কম হওয়া প্রসঙ্গে অরুন চন্দ্র পাল বলেন, তাঁদের কাছে মনে হয়েছে সিলেট বিভাগে মানসম্মত শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া মানবিক শাখায় বেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাস কম করায় পাসের হারে পিছিয়ে পড়েছে। বিষয়ভিত্তিক ফলাফলে সাধারণ বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার্থীরা কম পাস করেছে। এতে ফলাফলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
পাসে এগিয়ে সুনামগঞ্জ, পিছিয়ে হবিগঞ্জ
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শিক্ষা বোর্ডের অধীনে থাকা চার জেলার মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফল করেছে সুনামগঞ্জ জেলা। সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে হবিগঞ্জ। সুনামগঞ্জ জেলায় পাসের হার ৭৪ দশমিক ৪১। পাসের হারে এগিয়ে থাকলেও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে সবচেয়ে পিছিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা। সুনামগঞ্জে জিপিএ-৫ প্রাপ্তের সংখ্যা ৬৪৫। হবিগঞ্জ জেলায় পাসের হার ৭২ দশমিক শূন্য ৫।
এদিকে জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে রয়েছে সিলেট জেলা। সিলেটে জিপিএ-৫ প্রাপ্তের সংখ্যা ২ হাজার ৫৭৭। যদিও গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৬১৯। সিলেট জেলায় পাসের হার ৭৪ দশমিক শূন্য ৪। পাসের হারেও তৃতীয় স্থানে রয়েছে মৌলভীবাজার জেলা। জেলায় পাসের হার ৭২ দশমিক ১৭। মৌলভীবাজারে জিপিএ-৫ প্রাপ্তের সংখ্যা ১ হাজার ৩১৩। হবিগঞ্জ জেলায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তের সংখ্যা ৯৩৬।
পাসের হারে ছেলেরা এগিয়ে, জিপিএ-৫-তে মেয়েরা
ঘোষিত ফলাফল ঘেঁটে দেখা গেছে, পরীক্ষায় ছেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম অংশ নিয়ে পাসের হারে ভালো ফল করেছে। ছেলেদের পাসের হার ৭৪ দশমিক ৩৬ এবং মেয়েদের পাসের হার ৭২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। তবে জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। এবারের পরীক্ষায় ২ হাজার ৮৫৫ জন মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছেলেদের সংখ্যা ২ হাজার ৬১৬। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৪ হাজার ১৪৭ জন মেয়ে এবং ৪৪ হাজার ৯২৬ জন ছেলে। এর মধ্যে পাস করেছে ৩৩ হাজার ৪০৬ জন ছেলে এবং ৪৬ হাজার ৬০০ জন মেয়ে পাস করেছে।
বিজ্ঞানে ভালো ফল
বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফল করেছে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা। এ বিভাগে পাসের হার ৮৮ দশমিক ১৪, যা গত বছর ছিল ৯১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ বিভাগে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৯৭, তবে গত বছর এর হার ছিল ৮৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। সবার নিচে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ বিভাগের পাস করেছে ৬৮ দশমিক ৫০ শতাংশ, গতবার ছিল ৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪ হাজার ১৫৩। এর মধ্যে পাস করেছে ২১ হাজার ২৮৯ জন। মানবিক বিভাগে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৭ হাজার ৫৪৭। এর মধ্যে পাস করেছে ৫৩ হাজার ১১৬ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ হাজার ৩৭৩। পাস করেছে ৫ হাজার ৬০১ জন।
সাধারণ বিজ্ঞানে অকৃতকার্য বেশি
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা সাধারণ বিজ্ঞান বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। ৭০ হাজার ৭৩৫ জন শিক্ষার্থী বিষয়টিতে পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ৬২ হাজার ৮৬৩ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৭ হাজার ৮৭২ জন শিক্ষার্থী। সাধারণ বিজ্ঞান বিষয়ে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৮৭। এ ছাড়া গণিত বিষয়ে ৯৮ হাজার ১৯৪ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮৭ হাজার ৬০৪ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ১০ হাজার ৫৯০ জন। গণিতে পাসের হার ৮৯ দশমিক ২২।
এ ছাড়া এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ধর্মশিক্ষা বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে ১ হাজার ১০৫ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে ৭৪ হাজার ৫৯০ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ৭৩ হাজার ৯৮২ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৬০৮ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ১৮। হিন্দুধর্ম বিষয়ে ১৭ হাজার ১৮৫ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৬ হাজার ৬৯০ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৪৯৫ জন। পাসের হার ৯৭ দশমিক ১২। বৌদ্ধধর্ম বিষয়ে ৪ জন অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে। খ্রিষ্টান ধর্ম বিষয়ে ২৩১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ২২৯ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ২ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ১৩।