পটিয়া উপজেলা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে মারামারির পর দুজনকে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত বুধবার বিকেলে চৌধুরী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র
পটিয়া উপজেলা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে মারামারির পর দুজনকে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত বুধবার বিকেলে চৌধুরী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র

পটিয়া উপজেলা নির্বাচন

১০ কেন্দ্রে ‘অস্বাভাবিক’ ভোট 

এই ১০ কেন্দ্রে ভোট পড়ে ৫১ থেকে ৭৮ শতাংশ। লিখিত অভিযোগ দিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। 

পটিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১০টি কেন্দ্রে ‘অস্বাভাবিক’ ভোট পড়েছে—৫১ থেকে ৭৮ শতাংশ। এসব কেন্দ্রের ৯টিতেই চেয়ারম্যান পদে দোয়াত–কলম প্রতীকের দিদারুল আলম বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। ভোট চলাকালে এই কেন্দ্রগুলো থেকে আনারস প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ। পরে ফলাফল ঘোষণার আগেই তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর এ–সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ জমা দেন। 

এই ১০ কেন্দ্রে দোয়াত-কলম প্রতীক ভোট পায় ১২ হাজার ৯৩১টি। বিপরীতে আনারসের ১ হাজার ৫৬১ ভোট। এই কেন্দ্রগুলোতে ভোটের ব্যবধান ১১ হাজার ৩৭০। আর দিন শেষে দোয়াত-কলম প্রতীকের দিদারুল আলম জয় পেয়েছেন ১০ হাজার ৩২৯ ভোটের ব্যবধানে। এর মধ্যে দোয়াত-কলম অনুসারীরা ব্যালট পেপার ছিনতাই করায় পূর্ব পিঙ্গলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটির ভোট বাতিল করা হয়।

গত বুধবার তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনটির কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, পটিয়ার ১২৭ কেন্দ্রে গড়ে ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ ভোট পড়ে। কিন্তু অস্বাভাবিক বেশি ভোট পড়া কেন্দ্রগুলোর ওপর ভর করে জিতে যান যুবলীগ নেতা দিদারুল আলম। নগর যুবলীগের রাজনীতি করা দিদারুল মোট ৫৬ হাজার ৫৪১ ভোট পান। প্রতিদ্বন্দ্বী পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ পান ৪৬ হাজার ১৪২ ভোট। 

জানতে চাইলে আনারস প্রতীকের প্রার্থী হারুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভোট চলাকালে এই কেন্দ্রগুলো নিয়ে বারবার অভিযোগ করেছি; কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সারা পটিয়ার ভোটের ধরন একরকম; আর এই কেন্দ্রগুলোতে অস্বাভাবিক বেশি ভোট পড়েছে। সেগুলো পড়েছে দোয়াত–কলমে। আমার এজেন্টদের বের করে দিয়ে ভোট নেওয়া হয়।’ 

বিজয়ের পর দিদারুল আলম অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘হেরে গিয়ে এখন অনেকে অভিযোগ দেবে। কিন্তু জনগণের ভোটে আমি জিতেছি। সুন্দর একটি ভোট হয়েছে এখানে।’ 

অস্বাভাবিক সবচেয়ে বেশি ৭৮ শতাংশ ভোট পড়ে শোভনদন্ডী কুরাঙ্গিরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। এখানে দোয়াত-কলম ভোট পায় ২ হাজার ১৩৪টি। আনারস পায় মাত্র ৬৭টি। আনারসের এজেন্টদের দুপুরের আগেই বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। 

কীভাবে এত ভোট পড়ল জানতে চাইলে কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শিক্ষক আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, যা ভোট হয়েছে তা–ই দেখানো হয়। আনারসের এজেন্টদের তো আমি বাড়ি গিয়ে ফলাফলের তালিকা পৌঁছে দিতে পারব না।   

আবার পটিয়ার শোভনদন্ডী স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। এখানে দোয়াত-কলম পায় ১ হাজার ৮৯৮ ভোট। আনারসের মাত্র ২৫টি। 

আলোচিত ১০টি কেন্দ্রের মধ্যে করল সুরমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫৩ শতাংশ ভোট পড়ে। এখানে ৫৩৫ ভোট পেয়ে প্রথম হয় আনারস। দোয়াত-কলম পায় ২৭৮ ভোট। কিন্তু এখানে ৩৭৮ ভোট অবৈধ হিসেবে দেখানো হয়। 

কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন ধলঘাট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুর রহমান। অবৈধ ভোট প্রসঙ্গে সাইফুর বলেন, ওই ভোটগুলো বিধিমোতাবেক হয়নি। ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর না থাকাসহ নানা অসংগতির কারণে বাতিল হয়। এ জন্য অবৈধ ভোট বেশি দেখা যাচ্ছে। 

১২৭ কেন্দ্রের মধ্যে দোয়াত-কলম ৬৩ কেন্দ্রে আনারসের চেয়ে বেশি ভোট পায়। এর মধ্যে অস্বাভাবিক ভোট পড়া এই ১০টি কেন্দ্র ছাড়া বাকিগুলোর ব্যবধান খুবই সামান্য। এসব কেন্দ্রে ভোটের হার ছিল স্বাভাবিকের মধ্যে। অর্থাৎ ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ। 

সবচেয়ে কম ৯ শতাংশ ভোট পড়ে লাখেরা উচ্চবিদ্যালয় মহিলা কেন্দ্রে। এ ছাড়া ১১ থেকে ২০ শতাংশ ভোট পড়ে ১১টি কেন্দ্রে। ২১ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়ে ৪৫ কেন্দ্রে। ৩১ থেকে ৪০ শতাংশ পড়ে ৪৯টিতে। ১১ কেন্দ্রে ৪১ থেকে ৫০ শতাংশ ভোট পড়ে। 

একই দিন দক্ষিণ চট্টগ্রামের আরও তিন উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই তিন উপজেলায় গড় ভোট পটিয়ার চেয়ে বেশি। কিন্তু কোনো কেন্দ্রে কুরাঙ্গিরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো এত ভোট পড়েনি। পটিয়ার পাশের বোয়ালখালী উপজেলার ৮৬ কেন্দ্রে গড়ে ভোট পড়েছে ৩৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এখানকার একটি কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ ভোট পড়ে। 

চন্দনাইশ উপজেলার ৬৮ কেন্দ্রে গড়ে ৩২ দশমিক ৩২ শতাংশ ভোট পড়ে। এখানে একটি কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৫৮ শতাংশ ভোট পড়ে। আনোয়ারা উপজেলার ৭৪ কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ২৭ গড়ে ভোট পড়েছে। সর্বোচ্চ ৬৬ দশমিক ৪২ ভোট পড়ে একটি কেন্দ্রে।  

অস্বাভাবিক ভোটের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম প্রামাণিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। আমার কাছে এখনো কোনো অভিযোগও পৌঁছেনি।’