শামীম ওসমানের আসনে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন বিএনপির গিয়াস উদ্দিন: নির্বাচন কর্মকর্তা

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন
ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জ–৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে নির্বাচনের জন্য বিএনপি নেতা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন এবং তাঁর ছেলে মোহাম্মদ কায়সার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।

তাঁর দাবি, আজ রোববার বিকেলে জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিনিধির মাধ্যমে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তাঁরা। গিয়াস উদ্দিন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। তবে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন গিয়াস উদ্দিন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী মো. ইস্তাফিজুল হক আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, গিয়াস উদ্দিন ও তাঁর ছেলের পক্ষে প্রতিনিধি এসে স্বতন্ত্র থেকে মনোনয়নপত্র নিয়ে গেছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে শামীম ওসমান ও স্বতন্ত্র থেকে তিনজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এ নিয়ে মোট চারজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। স্বতন্ত্র থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা অপরজন হলেন রাশেদুল ইসলাম। তিনি রাশেদুল ইসলাম অনলাইন সংবাদ পোর্টাল নারায়ণগঞ্জ মেইলের নির্বাহী সম্পাদক।

মনোনয়নপত্র সংগ্রহের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বিএনপি নেতা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর ছেলে মোহাম্মদ কায়সারের মুঠোফোনে কয়েক দফা কল করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে গিয়াস উদ্দিন ফেসবুকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করে দাবি করেছেন, তিনি স্বতন্ত্র থেকে কোনো মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। সরকারি দলের কতিপয় গোষ্ঠী যোগসাজশ করে তা ছড়াচ্ছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমরা দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একদফা আন্দোলনে আছি। সরকারের পদত্যাগ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।’

গিয়াস উদ্দিনের ফেসবুক পোস্টটি নজরে আনা হলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ইস্তাফিজুল হক আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ও ভোটার তালিকা সিডির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে আমাদের এখান থেকে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন তাঁর (গিয়াস উদ্দিনের) প্রতিনিধি। যিনি মনোনয়নপত্র নিয়েছেন, তাঁর নাম–ঠিকানা আমাদের কাছে রয়েছে।’

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, দল থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। গিয়াস উদ্দিন আদৌ স্বতন্ত্র থেকে মনোনয়নত্র নিয়েছেন কি না, সেটি যাচাই করে দেখা হচ্ছে। তাঁর পক্ষে কেউ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মনোনয়নপত্র তুলে নিয়েছেন কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি গিয়াস উদ্দিন দলের নির্দেশনার বাইরে মনোনয়নপত্র তুলে থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্র।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমান একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের প্রার্থী মনির হোসেন কাশেমীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই আসন থেকে তিনি ১৯৯৬, ২০১৩ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে এ আসনে আসনটিতে আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রয়াত চিত্রনায়িকা সারাহ্ বেগম কবরী।

গিয়াস উদ্দিন একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে নির্বাচন করেন তিনি। আওয়ামী লীগ ছাড়ার সময় গিয়াস উদ্দিন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি ছিলেন। ওই নির্বাচনে গিয়াস উদ্দিন শামীম ওসমানকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নারায়ণগঞ্জে নানা কারণে এই দুই নেতা আলোচিত ও সমালোচিত।

গিয়াস উদ্দিন নির্বাচনে দাঁড়ালে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন বলে ভোটারদের ভাষ্য। তবে বিষয়টি নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই জানিয়ে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন) রাজনীতি করেন, মনোনয়নপত্র নিতেই পারেন। আমরাও চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। তাদের মনোনয়নপত্র নেওয়ার বিষয়টি আমরা আমলে নিচ্ছি না। আমাদের প্রার্থী (শামীম ওসমান) দাঁড়িয়েছেন, দল তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমরা তাঁকে নিয়েই আছি। ২০০১ সালের নির্বাচনে শামীম ওসমানকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পরাজিত করা হয়েছিল। অবাধ, সুষ্ঠু ভোটে যে কেউ অংশ নিতে পারেন। সেটি নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।’