শরীয়তপুরের ১১ বছর বয়সী এক মাদ্রাসাছাত্রকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার ভোরের দিকে ডামুড্যা উপজেলার মডেরহাট বায়তুর রাসুল (সা.) মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সময় ওই ছাত্র মাদ্রাসার একটি কক্ষে ঘুমিয়ে ছিল।
ওই মাদ্রাসাছাত্রের নাম শাহাদাত। সে ডামুড্যা উপজেলার চরমালগাঁও এলাকার মোস্তাকিমের ছেলে। পরিবারের সদস্যরা উদ্ধার করে সকালে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
শিক্ষার্থী শাহাদাতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শাহাদাতের বাড়ি থেকে মাদ্রাসার দূরত্ব আধা কিলোমিটার। এ কারণে পরিবারের সদস্যরা তাকে মাদ্রাসার একটি কক্ষে থাকার ব্যবস্থা করেন।
ডামুড্যার মডেরহাট এলাকায় বায়তুর রাসুল (সা.) মাদ্রাসাটি ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই মাদ্রাসায় নাজেরা ও হেফজ বিভাগে ১৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ১১ জন শিক্ষার্থী মাদ্রাসার একটি কক্ষে থাকে। সোমবার রাতের খাবার খেয়ে শাহাদাত মাদ্রাসার অন্য আবাসিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ে। ভোররাতের দিকে তার চিৎকারে মাদ্রাসায় থাকা শিক্ষকেরা ছুটে আসেন। তখন তাঁরা দেখতে পান শাহাদাতের গলা কাটা এবং সেখান থেকে রক্ত ঝরছে। তখন ওই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও মুহতামিম আবু হানিফ শিক্ষার্থী শাহাদাতের বাবাকে ঘটনা জানান। শাহাদাতের বাবা আহত ছেলেকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তার রক্ত ঝরা না থামলে তাকে পাশের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেখানে তার গলায় অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর আবার তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শাহাদাতের বাবা মোস্তাকিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাড়ির পাশের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। দুই বছর আগে তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছিলাম। বাড়ি থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে মাদ্রাসায় চলে যেত। রাতে সেখানেই থাকত। মঙ্গলবার ভোররাতের দিকে মাদ্রাসার শিক্ষক ফোন করে ছেলের গলা কাটার কথা জানায়। রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি। কারা কী উদ্দেশ্যে এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা বুঝতে পারছি না। মাদ্রাসার শিক্ষকেরাও কিছু বলতে পারছেন না। যেভাবে গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে তা দেখে মনে হচ্ছে কেউ আমার ছেলেকে হত্যা করতে চেয়েছিল।’
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও মুহতামিম আবু হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্ররা যে কক্ষে রাতে ঘুমিয়ে ছিল, তার পাশেই আমি ছিলাম। ভোররাতের দিকে তাদের চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। ছুটে গিয়ে দেখি শাহাদাতের গলা থেকে রক্ত ঝরছে। দ্রুত তাকে নিয়ে হাসপাতালে যাই। কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো জানতে পারিনি। শাহাদাতের সঙ্গে যে ছাত্ররা ছিল, তারাও কিছু বলতে পারেনি।’
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কাটা হয়েছে। খাদ্য ও কণ্ঠনালির ওপর আঘাত লেগেছে। সেখানে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। রক্ত বন্ধ করতে অস্ত্রোপচার করা লেগেছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শিশুটি শঙ্কামুক্ত কি না, তা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর বলা যাবে।’
ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান মানিক প্রথম আলোকে বলেন, কোনো মাদ্রাসার শিক্ষার্থীকে গলা কেটে আহত করা হয়েছে, এমন অভিযোগ পাইনি। এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। এরপর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।