চতুর্থ শ্রেণি থেকে এ বছর পঞ্চম শ্রেণিতে উঠেছে রাব্বী শেখ (১২)। কিছুদিন পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসও করেছে। তবে কিছুদিন ধরে রাব্বী আর স্কুলে যাচ্ছে না। বই-খাতা ছেড়ে রাব্বীর সঙ্গী হয়েছে বাবার রিকশা। রাব্বীর বাবা মিন্টু শেখ অসুস্থতার কারণে প্রায় এক মাস ধরে রিকশা চালাতে পারছেন না। এতে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির আয় বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবারের পাঁচ সদস্যের খরচ, পাশাপাশি বাবার চিকিৎসার টাকা—সব মিলিয়ে বাধ্য হয়ে রাব্বী পড়াশোনা ছেড়ে রিকশা চালানো শুরু করেছে।
রাব্বীর বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের ফকিরডাঙ্গা গ্রামে। তিন সপ্তাহ ধরে শিশু রাব্বী পুরোদস্তুর রিকশাচালক। নিজের শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী, কখনো সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত, আবার কখনো বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যাত্রী বহন করছে সে। তবে বয়স কম দেখে অনেকেই রাব্বীর রিকশায় উঠতে চান না।
গত বুধবার সকালে রাব্বীর সঙ্গে কথা হয় গোয়ালন্দ শহরের কাইমুদ্দিন প্রামাণিক পাড়ায়। গোয়ালন্দ বাজার থেকে যাত্রী নিয়ে আসছিল সে। যাত্রী নামিয়ে দেওয়ার পর রাব্বীর সঙ্গে আলাপ হলো। রাব্বী জানাল, বাড়িতে মা-বাবা ছাড়া বড় বোন আর ছোট এক ভাই আছে। বড় বোন মিথিলা আক্তার স্থানীয় একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর ছোট ভাই রিপন শেখ প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। ভাই-বোনের মতো রাব্বীও নিয়মিত স্কুলে যেত। কিন্তু দরিদ্র রিকশাচালক বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হওয়ায় আর রিকশা চালাতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে বাবার ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে বেরিয়েছে রাব্বী।
রাব্বী বলে, ‘প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হচ্ছে। ওই টাকা দিয়ে সংসারের প্রতিদিনের খরচ চালাতে হয়। আব্বার জন্য ওষুধও কিনতে হয়। ঠিকমতো রিকশা চালাতে পারি না, তারপরও চেষ্টা করছি। আমি ছোট বলে ভয়ে অনেকে আমার রিকশায় উঠতে চায় না।’
রাব্বীর মা জোসনা খাতুন বলেন, ‘জিনিসপত্রের অতিরিক্ত দামের কারণে এমনিতে আমাদের চলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এরপর তিন-চার মাস ধরে রাব্বীর বাবা অসুস্থ। গ্যাস্ট্রিক থেকে পেটে আলসার ধরা পড়েছে। বর্তমানে এক মাসের বেশি ধরে রিকশা চালাতে পারেন না। তিন ছেলে, এক মেয়েসহ পাঁচজনের প্রতিদিন সংসার চালাতে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা লাগে। এই টাকার জোগাড় করব কীভাবে! তাই বড় ছেলে হিসেবে এখন রাব্বীই আছে। উপায় না পেয়ে রাব্বী এখন রিকশা চালাচ্ছে। প্রথম কয়েক দিন এলাকায় ঘোরাঘুরি করছে। এখন যাত্রী নিয়ে দূরদূরান্তে যেতে পারছে।’
মুঠোফোনে রাব্বীর বাবা মিন্টু শেখের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানালেন, আগে সুস্থ থাকতে কোনোরকমে সংসার চলে যেত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ছেলের আয় আর ধারদেনা করেই সংসার চলছে। মিন্টু শেখ বলেন, ‘আমি আর পারছি না। নিজের জমিজাতি কিছুই নেই। বাড়িতে শুধু বাবার রেখে যাওয়া ৫ কাঠা জমিতে একটি টিনের দোচালা ঘর ছাড়া কিছুই নেই। রিকশা চালিয়ে তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে কোনোভাবে চলতাম। এখন তো আমি রিকশাও চালাতে পারি না। সবার সাহায্য-সহযোগিতা পেলে চিকিৎসা করে আমি সুস্থ হতে পারলে চলতে-ফিরতে পারতাম।’